Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তুরষ্কের রাষ্ট্রদূতকে একের পর এক প্রশ্ন, জবাবে যা বললেন

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তুরষ্কের রাষ্ট্রদূতকে একের পর এক প্রশ্ন, জবাবে যা বললেন

বাংলাদেশ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। যেটা নিয়ে বাংলাদেশ নিয়োজিত বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। এবার ঢাকায় নিযুক্ত মুস্তাফা ওসমান যিনি তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন, তিনি বলেন, বাংলাদেশ আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে করে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক ভাবে সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। নির্বাচনে প্রধান দলগুলোসহ সকল দলের অংশগ্রহণ অবশ্যই প্রয়োজন। সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের সদিচ্ছা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেইসাথে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং অন্য সকল দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। আশা করছি, সরকার দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। পরবর্তী নির্বাচনে যে দলই জিতুক না কেন, তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কোনো প্রভাব পড়বে না। তুরস্ক চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।

বুধবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন এই কূটনীতিক। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

অনুষ্ঠানে কূটনীতিকের বক্তব্য ও প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি, জলবায়ু পরিবর্তন এমনকি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে শীতল সম্পর্কসহ বিভিন্ন দিক উঠে আসে।

তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা বলেন, বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির সমাধান করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমার থেকে আগত শরনার্থীরা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সব ধরনের কূটনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে তুরস্ক সরকার। বাংলাদেশের মতো তুরস্কও শরণার্থী সংকটের সম্মুখীন। বিপুল সংখ্যক সিরীয় শরণার্থী তুরস্কে রয়েছে। তারপরও মিয়ানমার থেকে আগত শরনার্থীদের বিষয়টি সমাধানে তুরস্ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে।

নির্বাচন সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্নের জবাবে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থান বুঝতে পারছি। আমি মনে করি আপনি আমাকে আপনার চিন্তা না বলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন. বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের সুযোগ অবশ্যই আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন তা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি স্থিতিশীলতার কারণে। আমরা স্বীকার করি যে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আমার দেশ সহ অনেক দেশে এই সমস্যা আছে। সরকার যদি মত প্রকাশের সুবিধা দেয় তাহলে যে উ”ত্তেজনা রয়েছে তা অনেকটাই কমবে।

ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি খুবই ভালো চলছে। এই বিষয়ে পক্ষ না নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা বলেন, তুরস্ক জ্বালানি সম্পদের দেশ নয়। বরং আমরা একটি ট্রানজিট দেশ। রাশিয়ান ফেডারেশন বলেছে যে তারা তুরস্ককে ইউরোপে তেল ও গ্যাস রপ্তানির জ্বালানি কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চায়। যদি বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হয় এবং কিছু সম্পদ পাওয়া যায় এবং আমাদের একটি ট্রানজিট দেশ হিসেবে ভূমিকা রাখতে হয়, তাহলে আমরা তা করতে পেরে বেশ খুশি হব।

এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে যা হয়েছে তা আসলে প্রতিরক্ষা নয়, পুলিশ প্রশিক্ষণ নিয়ে। তবে এ বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে চাই। তিনি বলেন, যেহেতু এটা ‘পাবলিক ডকুমেন্ট’ তাই এখানে বলা যায় যে, আর্মা”/র্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার, রকে’ট ল”ঞ্চার, ড্রো’নসহ কিছু পণ্য বাংলাদেশ কিনেছে। এটি শুধু ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।

তিনি বলেন, তুরস্কের একটি কোম্পানি শেল তৈরির প্রযুক্তি বাংলাদেশের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে দিয়েছে এবং তা এখানে তৈরি হচ্ছে। আমরা পেট্রোল বোট তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করেছি, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন। গৃহীত হলে খুলনা ও চট্টগ্রামে নয়টি পেট্রোল বোট নির্মাণ করা হবে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের একটি চুক্তি রয়েছে। আর্থিক সহায়তার আওতায় বাংলাদেশ তুরস্কের কাছ থেকে অর্থ দিয়ে প্রতিরক্ষা পণ্য কিনতে পারে।

প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন সিজিএস চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী, ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস), বাংলাদেশ প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী সাধন কুমার দাস। অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করেছে এফইএস।

এ ছাড়া প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ড. তাওহিদ হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ, বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, লে. জেনারেল (অব.) আমিনুল করিম, ফায়াজুল হক রাজু, ডা. জামাল উদ্দিন, ডা. সরদার নাঈম, ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম প্রমুখ।

এদিকে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা নানা ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। যেখানে তারা গণতন্ত্রের দিকটিকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন। এদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন রাষ্ট্রদূতেরা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের শেষ দিকে কিংবা ২০২৪ সালের প্রথমদিকে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *