Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে পাশে নেই মিত্ররা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে পাশে নেই মিত্ররা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনার পর পশ্চিমা দেশগুলো যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু বক্তব্যের ভাষা নিয়ে তারা দ্বিমত পোষণ করেন। একমত হতে সময় লাগে দু’দিন। এরপর দেওয়া বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সাতটি দেশ বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানায়।

তবে সংঘর্ষের দিন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে যে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। ২৭টি পশ্চিমা দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২৯ অক্টোবর পৃথক বিবৃতিতে এ বিষয়ে শোক প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের ঘটনা এবং বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর অবস্থান স্পষ্টতই ভিন্ন।

এর আগে ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা যৌথ বিবৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেন। বক্তব্যের ভাষা নিয়ে ঐকমত্য হতে এখনও দুই দিন লেগেছে। শেষ পর্যন্ত, ১৩ টি দেশ শুধুমাত্র ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ নিয়ে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনায় পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে একমত হতে যুক্তরাষ্ট্রকে বেগ পেতে হবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যে ভাষায় বিবৃতি দিতে চায় তাতে অন্যরা দ্বিমত পোষণ করে। বক্তব্যের ভাষা পরিবর্তনে শর্ত আসছে, ঐক্যমতে পৌঁছাতে সময় লাগছে। অবশেষে নমনীয় ভাষায় বিবৃতি তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশে আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে সম্প্রতি ঢাকায় পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সমকাল। নির্বাচন ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে তাদের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি কেউ। তবে অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যে তারা তাদের অবস্থান জানান।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই বলেছে যে তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছে। এ জন্য তারা সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে ভিসা দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে ওয়াশিংটন। এদিকে রাশিয়া ও চীন তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে যে নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, যা সংবিধান অনুযায়ী হবে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে বলেও মনে করে রাশিয়া ও চীন। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তবে নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মতামতের বিপক্ষে গিয়ে ভারত বলেছে, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইতালি, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড এবং জাপানের নিজস্ব দৃষ্টি, কৌশলগত লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার রয়েছে বাংলাদেশ নিয়ে। তাই বাংলাদেশে নির্বাচন ও শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন করছে না। যদিও তারা বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রয়েছে।

ঢাকায় একজন পশ্চিমা কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। তবে নির্বাচন সেভাবে না হলে তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এবং আমরা আমাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিই। অগ্রাধিকার মিললেই সিদ্ধান্ত একই হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “বাস্তবতার সঙ্গে প্রত্যাশা মেলাতে হবে। আমরা শুধু আহ্বান করতে পারি, এর বেশি কিছু না।’

পশ্চিমা মিত্ররা বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নেই? এ বিষয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের মন্তব্য জানতে চাইলে তারা জানান, এ বিষয়ে এখনই কোনো বক্তব্য নেই।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র যখন ২০২১ সালে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তখন অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন যে যুক্তরাজ্য সহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ থেকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।

এয়ারবাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি দেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, “সম্প্রতি বাংলাদেশে এয়ারবাস নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে একটি বড় চুক্তি হয়েছে। আমাদেরও এ ধরনের ব্যবসা আছে। এ অবস্থায় আমরা অন্যের স্বার্থে কারও সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারি না।

পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশটিতে আমাদের দূতাবাস রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কী করছে, সে বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত খবর পাই। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম কয়েক মাস ইমরান খানের নাম পর্যন্ত লিখতে পারেনি। গণতন্ত্রের ধারা দুই দেশে দুই রকম হতে পারে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত সাবেক এক দেশের কূটনীতিক সম্প্রতি বলেন, আমরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কিন্তু না হলে কিছু করার নেই। কারণ অন্য কিছু করা আমাদের নীতি নয়।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর হবে, তা আগে থেকেই দৃশ্যমান ছিল। কারণ, আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন্স (এএফএল-সিআইও) বিশ্বের সব দেশে শ্রম অধিকার নিয়ে জোরালো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে। তাছাড়া, শ্রম অধিকারের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র তাদের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করেছে। শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হলে ভিসা ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের হুমকিও দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইইউ বাংলাদেশের শ্রম অধিকারকে ভিন্নভাবে দেখছে। ইইউ জিএসপি পর্যালোচনা দলের সাম্প্রতিক সফর প্রসঙ্গে ঢাকায় সংস্থাটির রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, বাংলাদেশে শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। ইইউ জিএসপি পর্যালোচনা দলের সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার যাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল তাদের সবার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। চার্লস হোয়াইটলি উল্লেখ করেছেন যে, প্রতিনিধি দল বুঝতে পেরেছে যে জিএসপি সম্পর্কিত ভবিষ্যতে কোথায় সহযোগিতা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, শ্রম অধিকার নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক অনেক পুরনো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক মিল রয়েছে। কিন্তু ইইউ বাংলাদেশের সাথে তার নিজস্ব উপায়ে কাজ করে। ইইউ বাংলাদেশের সাথে যেভাবে কাজ করছে তা ভালো ফলাফল পাচ্ছে উল্লেখ করে হোয়াইটলি বলেন, “ইইউ বাজারে শ্রম অধিকারের সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশের কাছে ২০৩২ সাল পর্যন্ত সময় আছে।”

ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, জিএসপির মতো অন্যান্য বিষয়ে ইইউর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আমরা আলোচনা করি এবং ইইউর মতো বিষয়গুলির কেয়ার নিই। আর নির্বাচনী বিষয়গুলো দেখার জন্য বাংলাদেশে রয়েছে ইইউর একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দল।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা মিত্রদের ভিন্ন ভিন্ন অগ্রাধিকার রয়েছে। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কৌশলগত লক্ষ্য চীনের আধিপত্য রোধ করা। তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও আধিপত্য বাড়িয়েছে।

 

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *