বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর মধ্যে যে মুখোমুখি অবস্থান চলছে, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশের বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে তারা দুই ভাগে বিভক্ত।
জাতীয় নির্বাচনের পরপরই ভারত, চীন ও রাশিয়া শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এছাড়া জাপান, সৌদি আরবসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কমনওয়েলথ মহাসচিবও অভিনন্দন বার্তা পাঠান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের বিবৃতিতে ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হয়নি।
কয়েক মাস আগে থেকেই বৈশ্বিক শক্তিগুলো প্রকাশ্যে বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের অবস্থান উল্টে দিয়েছে। গত মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করলে এর চূড়ান্ত প্রকাশ দেখা যায়।
এর আগেও বাংলাদেশ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এদিকে চীন প্রকাশ্যে শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন করে।
এবং দিল্লিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশটির টু-প্লাস-টু বৈঠকের পর ভারতের অব্যাহত সমর্থন আরও স্পষ্ট হয়েছিল। এরপর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা এতে বাইরের হস্তক্ষেপ সমর্থন করে না।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচনের আগে ও পরে পুরো সময়জুড়েই আলোচনায় ছিলেন। মাঝে মাঝে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্যদিকে রাশিয়া অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিরোধীদের উস্কানি দিচ্ছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে আরব বসন্তের মতো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে মার্কিন সরকার।
অবশ্য নির্বাচনের আগের মতো অতটা উত্তাপ এখন দেখা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সুর কি কিছুটা নরম?
নির্বাচন নিয়ে দেয়া বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গঠন, মানবাধিকার ও বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দেয়ার পরিবর্তে ইন্দো প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। ফলে তারা যে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে সেটা ধারণা করা যায়।
বিরোধী দলের কর্মীর গ্রেফতার এবং নির্বাচনের দিনের অনিয়মের প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ জানালেও পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, বাংলাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
বিরোধী কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিনের অনিয়মের রিপোর্ট নিয়ে উদ্বেগ সত্ত্বেও, স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, “আমরা বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
নির্বাচন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিবৃতিতেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, নির্বাচনের দিন লাখ লাখ বাংলাদেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেন, ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া একটি মুক্ত, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চলের জন্য অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।