বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে সর্বস্তরের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে, কোনো বিশেষ দলের পক্ষে নয়। স্থানীয় সময় সোমবার (৬ নভেম্বর) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এ তথ্য জানান।
একজন ব্যক্তি প্রেস ব্রিফিংয়ে বেদান্ত প্যাটেলকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কর্মীরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের অজুহাতে চলমান ভাংচুর ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশকে ব্যাহত করেছে। আপনি কি জাতীয়তাবাদী দলকে সহিংসতা বন্ধ করে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বলবেন?
জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, “আমরা আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং চালিয়ে যাব এবং আমরা সহিং”সতার যে কোনও ঘটনাকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিই।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীদারদের বাংলাদেশি জনগণের স্বার্থে একত্রে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং অব্যাহত রাখব।”
আরেক প্রশ্নে মার্কিন নাগরিক মিয়া আরেফির কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সত্যিই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। গত সপ্তাহে, জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতারা একজন আমেরিকান নাগরিককে তাদের সদর দফতরে মিডিয়ার সামনে নিয়ে এসেছিলেন যে তিনি (মিয়া আরেফি) রাষ্ট্রপতি বিডেনের একজন উপদেষ্টা এবং বাইডেনের সাথে দৈনিক ১০-১২ বার যোগাযোগ করে থাকেন। এরপর তিনি দলের আরেক নেতা পিটার হাসকে অবতার হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাকে জাতীয়তাবাদী দলের উদ্ধারকর্তা হিসেবে অভিহিত করেন। জাতীয়তাবাদী দলের এই দাবি কি আপনি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন?
এই প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দেখিনি এবং সত্যি বলতে কী আপনি যেটা বলছেন সেটা আমি সত্যিই জানি না।’
এ সময় প্রশ্নকর্তা বেদান্তের কথায় বাধা দিতে চাইলে তিনি বলেন, দয়া করে আমাকে বাধা দেবেন না। ঢাকায় আমাদের দূতাবাসে আমাদের একটি অত্যন্ত প্রতিভাবান দল রয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূত। যিনি শুধু বাংলাদেশে নয় বৃহত্তর অঞ্চলে কাজ করতে সক্ষম।
আরেক প্রশ্নে বলা হয়, সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদ চলছে। তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। উল্টো সরকার এক অর্থে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। আটক করা হয়েছে বিএনপি মহাসচিবসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের ৮ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে। ২৮ অক্টোবর থেকে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তার দলের সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন, বিরোধী দলের সদস্যদের আগুনে নিক্ষেপ করতে বা তাদের হাত পোড়াতে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- সেই পরিবেশ তৈরির জন্য আপনারা কি বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে সহায়তা করবেন?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এই মুখপাত্র বলেন, ‘এটা মনে রাখা জরুরি যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এটি আমরা আগেও বলেছি, আপনার বন্ধুর প্রশ্নের জবাবে আমরা এটি পুনরুল্লেখ করেছি। আমরা একটি রাজনৈতিক দলের ওপর জোর দিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেওয়ার পক্ষে নই। এই মুহূর্তে আমাদের ফোকাস হচ্ছে জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা।