সারা বিশ্বে এখন চলছে ডলার সংকট। আর এই সংকটের মধ্যে একটি খবর বেশ আলোচনা সমলোচনার সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে। জানা গেছে ইতালিতে ডাবলু চৌধুরী নামের এক বাংলাদেশির এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। আর এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি ভেনিসে একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব করেন। মিলানে বাংলাদেশ মিশন প্রস্তাবটির পক্ষে ইতালির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। ইতালির বিভিন্ন গণমাধ্যম এ নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। ডাবলু চৌধুরীর এই প্রস্তাবে ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে। গোটা বিশ্বে ডলারের প্রবল সংকটের মধ্যে ডাবলু চৌধুরীর এই প্রস্তাবে দেখা দিয়েছে ব্যাপক কৌতূহলও।
ডাবলু চৌধুরীর কোম্পানির নাম ইপসিলন মটরস ইঙ্ক যা যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত। কোম্পানির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভেনিসের মেয়রের কাছে প্রস্তাব পেশ করেন তিনি। প্রস্তাবের সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ যুগান্তরের কাছে পৌঁছেছে। পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরিতে ৯২০ মিলিয়ন ডলারের প্রাথমিক বিনিয়োগ করা হবে বলে জানা গেছে। গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজার দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করা হবে। কারখানার জন্য ভেনিসে ২৫০ হেক্টর জমি বিনামূল্যের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। এ ছাড়া কর সুবিধা ও প্রণোদনা নিয়েও আলোচনার কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয় যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বিশ্বের প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি ইতালি। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে বদ্ধপরিকর। এই ক্ষেত্রে, বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা এই প্রতিশ্রুতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রস্তাবে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ডাবলু চৌধুরী সোমবার টেলিফোনে বলেন, আমাদের কোম্পানিতে বিএমডব্লিউ বা মার্সিডিজের মতো বড় গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারিগরি জনবল রয়েছে। তারা মূলত কারখানার পরিকল্পনা করবে। মূলধনের জন্য বিশ্বখ্যাত ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ইতালিতে কারখানা স্থাপনের অনুমতি পেলে তারা পুঁজি বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক।
সম্ভাব্য স্টার্টআপ কোম্পানিগুলিকে ব্যক্তি, ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া মূলধনকে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বলে। ডাবলো চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তবে তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা, লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।
ডাবলু চৌধুরী জানান, তাদের প্রযুক্তি ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। বেতন, যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন খরচ যোগ করে তারা উঠে এসেছে ৯২ কোটি টাকা। এর মানে এই নয় যে তাদের কোম্পানি কোনো টাকা বিনিয়োগ করবে। পরিবর্তে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তাদের প্রকল্পে অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। ডাবলো চৌধুরী আরও বলেন, একই ধরনের প্রস্তাব কানাডা, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও হাঙ্গেরির কাছে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ৫০ বছরে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি ধীরে ধীরে অন্য গাড়ির জায়গা নেবে।
মিলানে বাংলাদেশ মিশন ডিবি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। ডাবলু চৌধুরীর নিয়ে জানতে চাইলে মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এমজেএইচ জাভেদ যুগান্তরকে বলেন, “ডাবলু চৌধুরী” আমাদের মাধ্যমে কোনো প্রস্তাব জমা দেননি। তিনি সরাসরি ভেনিসের মেয়রের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। জমা দেওয়ার পর প্রস্তাবের একটি অনুলিপি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।” প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে আমি ভেনিসের মেয়রের কার্যালয় পরিদর্শন করেছি।
প্রসঙ্গত,এ দিকে ডাবলু চৌধুরীর এই বিষয়ে দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বেশ আলোচনা। অনেকেই আবার তার আসল পরিচয় এবং টাকার উৎস খুঁজে বের করতে হয়ে যাচ্ছে মরিয়া।