গত বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে (ইপি) বাংলাদেশের বিষয়ে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে তা দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত। এমন পর্যবেক্ষণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু দলীয় রাজনৈতিক অবস্থান বা বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, দেশের সার্বিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাব করা দরকার।
প্রস্তাবে দেশের নাগরিকদের বিভিন্ন রাজনৈতিক অধিকার এবং বিভিন্ন মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার কথা বলা হয়েছে।
একটি উদাহরণ হিসাবে অধিকার মামলাটি গ্রহণ করে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর রেজুলেশনের একটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে আন্তর্জাতিক আইনের ক্রমাগত গুরুতর লঙ্ঘন সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইইউতে এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে। এতে অধিকার নিয়ে যা করা হয়েছে তা নিন্দনীয় পশ্চাদপসরণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ইবিএ সুবিধা চালু রাখা হবে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে প্রস্তাবে। ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে অনুষ্ঠিত এক অধিবেশনে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এ প্রস্তাব পাস করে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। এখানে তাদের প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের জন্য ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব, ভোট হবে ইইউ পার্লামেন্টে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য, ভোট হবে
ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইইউ দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা গত বছর বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে বেশিরভাগই তৈরি পোশাক ও চামড়াজাত পণ্য। আর বাংলাদেশ সেসব দেশ থেকে প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে, যার বেশিরভাগই বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি।
ইইউ অঞ্চলে অস্ত্র ছাড়া যে কোনো পণ্য (এভরিথিং বাট আর্মস-ইবিএ) কোনো শুল্ক ছাড়াই রপ্তানির সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন সরকার জিএসপি (জেনারালাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স) এর মাধ্যমে খুব সহজেই রপ্তানি সুবিধা বাড়ানোর জন্য আলোচনা করছে।
এ অবস্থায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাবের বাণী গৃহীত হয়েছে, যা বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিয়েছে বলে মনে করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই মানবাধিকার কর্মীর বিচারের রায়ের দিন অতিবাহিত হলেও এই প্রস্তাবে এমন অনেক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ ও জোটগুলো বহু বছর ধরে বলে আসছে। কিন্তু এই দেশগুলো এবং জোটগুলো আগে যা বলেছে এবং এখন যা বলছে তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এই কারণে, ইপিতে গৃহীত প্রস্তাবে শুধুমাত্র অধিকার-সম্পর্কিত বিষয়গুলি ধরে নেওয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে বাইপাস করার সুযোগ নেই।
প্রস্তাবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলকভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আশ্বাস চাওয়া হয়েছে। মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি, বিরোধী দলের নেতাদের গণগ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
প্রস্তাবের বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেল বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া তৈরি করতে রাজনৈতিক দলসহ সব দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কূটনীতিকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবেন কিনা তা জোসেফ বোরেলই সিদ্ধান্ত নেবেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের উচিত ইপির প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া। এবং নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশের সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
ইইউ পার্লামেন্ট বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নিশ্চয়তা চেয়ে প্রস্তাব পাস করেছে ইইউ পার্লামেন্ট বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নিশ্চয়তা চেয়ে প্রস্তাব পাস করেছে।
প্রস্তাবটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি হুমায়ুন কবির এতে উল্লেখিত বিচার বিভাগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাধারণত মানুষ বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বলে না। কিন্তু এই প্রস্তাবে বিচার বিভাগের মাধ্যমে নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আন্তর্জাতিক অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে।
হুমায়ুন কবির মনে করেন, বাংলাদেশের পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার এবং শিল্পে বড় বিনিয়োগের পাশাপাশি ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোরও এখানে প্রচুর সামাজিক বিনিয়োগ রয়েছে। শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি ইইউ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে অবদান রেখেছে।