যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপ সত্ত্বেও বাংলাদেশ জাতীয় স্বার্থে নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা সফররত রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা রো”হিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপ অব্যাহত রাখতে আমরা সহযোগিতা বজায় রাখছি। রাশিয়া মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বাইরের কিছু দেশ এই ইস্যুটিকে ব্যবহার করে একদিকে চাপ দিচ্ছে। এভাবে তারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও হস্তক্ষেপ করছে।
এ প্রসঙ্গে লাভরভ বলেন, এ প্রসঙ্গে ল্যাভরভ বলেন, আমি মনে করি, এটি অগ্রহণযোগ্য, এতে বিরূপ ফলই আসে। জাতিসংঘ, আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে রাশিয়া-বাংলাদেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের চাপ সত্ত্বেও আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুরা জাতীয় স্বার্থে তাদের পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হলেও আজ প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে এসেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ আমাদের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার। গত অর্ধশত বছর ধরে বন্ধুত্ব ও কূটনৈতিকভাবে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার মধ্যেও রাশিয়া-বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংলাপ আমরা অব্যাহত রেখেছি।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা সব ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে একমত হয়েছি। আমরা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্কও জোরদার করেছি। ভারতের পর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমাদের বাণিজ্যের আকার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর ২০২০ সালে এ আকার ছিল ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, আমাদের রূপপুর পারমা”ণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি নির্মাণের প্রকল্প রয়েছে। সময়সূচি অনুযায়ী প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। অক্টোবরে বাংলাদেশে পৌঁছাবে পারমাণ”’বিক জ্বালানির প্রথম ব্যাচ। গ্যাস খাতে সহযোগিতার অন্যান্য সম্ভাব্য প্রকল্প রয়েছে। আন্তর্জাতিক গ্যাস কোম্পানিগুলোও এ ব্যাপারে জড়িত। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ২০টি গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।
সের্গেই লাভরভ বলেন, বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের বাস্তবতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আলোচনা করেছে। গম ও সারের সম্ভাব্য সরবরাহ নিয়েও দুপক্ষ কথা বলেছেন। আজ আমরা কাজের পদ্ধতি পরিবর্তন এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়েও কথা বলেছি। দুই দেশের মানবিক সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়। রাশিয়ায় পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বাড়ানোর জন্য ঢাকা আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
জাকার্তায় আসিয়ান সম্মেলনে যোগদান শেষে দুই দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেছেন সের্গেই লাভরভ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এরপর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে একান্ত বৈঠক করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর তিনি জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে লাভরভের ঢাকা সফর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।