শ্রম অধিকার সংক্রান্ত মার্কিন স্মারকলিপি থেকে শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলে বাণিজ্য বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ কী দেওয়া হবে তা বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ রোডম্যাপ অনুযায়ী ৯০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। তবে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্কতার কথা বলেছেন। রপ্তানিকারকদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের একজন শ্রমিক অধিকারকর্মীকে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন।
স্বাক্ষরের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন সান ফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে বিশ্ব শ্রমিক নেতাদের সামনে তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের হুমকি-ধমকি দেবে; ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক অধিকারের জন্য কাজ করা ব্যক্তি এবং শ্রমিক সংগঠনের উপর হামলা করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা সহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এ সময় তিনি বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিক অধিকার কর্মী কল্পনা আক্তারের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তারা কল্পনা আক্তারের মতো মানুষের সঙ্গে থাকতে চান, যিনি (কল্পনা) বলেছিলেন, আমেরিকান দূতাবাস তার জন্য কাজ করেছে বলে তিনি এখনও বেঁচে আছেন।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ সমকালকে বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারা বিশ্বের জন্য শ্রম ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি দেশটি। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করতে পারে এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় দেশে ট্রেড ইউনিয়ন ছিল মাত্র ৩০০। এখন তা বেড়ে 1,200-এর বেশি হয়েছে। এখন খুব অল্প সংখ্যক কর্মী দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান করা যায়। এ ছাড়া গত ১০ বছরে তিনবার বাড়ানো হয়েছে শ্রমিকদের বেতন। তবে রাজনৈতিক কারণে নিষিদ্ধ হলে সেটা ভিন্ন কথা।
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খসড়া গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। প্রকাশের 14 দিনের মধ্যে খসড়া পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার সংস্থার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী চাইলে খসড়া থেকে কিছুটা বেতন বাড়াতে পারেন।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমরা নিজেদের স্বার্থে শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। এমতাবস্থায় কোনো দেশের মন্ত্রী কিছু বলেছে বলে আমি অস্থির হয়ে পড়েছি- এমনটা নয়। সরকার ইতোমধ্যে শ্রম আইন সংশোধনসহ শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহসান এলাহী সমকালকে বলেন, শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং আইএলওর রোডম্যাপে সরকারের গৃহীত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী গত আড়াই বছরে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে মার্কিন দূতাবাসের শ্রম প্রতিনিধিরা শ্রম মন্ত্রণালয়ে যান। এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান হয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে তিনি কল্পনা আখতার নামে একজন শ্রমিক অধিকারকর্মীর জীবনকে সমর্থন করবেন। কিন্তু কল্পনা আক্তার কখনোই শ্রম মন্ত্রণালয় বা তার আওতাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানকে কোনো অসুবিধার কথা জানাননি।
এহসান এলাহী বলেছেন যে তিনি সম্প্রতি শ্রম ইস্যুতে আইএলও নির্বাহী পরিষদের সভায় যোগ দিয়েছেন। টিকফা ও ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতির কথা জানানো হয়। এসব ক্ষেত্রে তাদের দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। তবে, ২০১৩ সাল থেকে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তারা কিছু ক্ষেত্রে আইএলওর সুপারিশ মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছে। ভবিষ্যতে এগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পদক্ষেপ কী হবে তা পররাষ্ট্র, আইন, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এফ রহমান।
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ড. মোস্তফা আবিদ খান সমকালকে বলেন, দেশের বিরুদ্ধে এমন ঘোষণা দেওয়ার আগে একটি প্রতিনিধিদলের উচিত সে দেশের সার্বিক শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা। কিন্তু যেহেতু এই ঘোষণা বৈশ্বিক, তাই কোনো নির্দিষ্ট দেশের পর্যালোচনা করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার কর্মীদের উল্লেখ বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কীসের ভিত্তিতে বাংলাদেশের নাম সামনে এনেছে তা খুঁজে বের করতে পুরো স্মৃতিসৌধটি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এখন সরকারের উচিত পুরো স্মারকলিপি বিশ্লেষণ করে নেওয়া