বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। আর এই কারনে দেশে নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা ধরনের আলোচনা। রাজনৈতিক মাঠেও এ নিয়ে চলছে বেশ অস্থিরতা। এ দিকে সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেনা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাউন্সিলের কৌশলগত যোগাযোগ সমন্বয়ক জন কিরবি বলেছেন, “বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সহিংসতা, হয়রানি এবং ভীতি মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
বুধাবার ওয়াশিংটনের ফরেন প্রেস সেন্টারে বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার সংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশটির অবস্থান প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবন্দি, বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন এবং মুক্তমতে বাধা প্রদানের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়।
চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিরোধীদলকে বাধা প্রধান ইস্যুতে জন কিরবি বলেন, “জনগণের প্রত্যাশাকে সম্মান দেখাতে সরকারকে মুক্তমত এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর সব জায়গাতেই স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ থাকা দরকার। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সুযোগ থাকতে হবে।”
ব্রিফ্রিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান-“বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এখনো কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে কালা কানুনের প্রয়োগ ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে আমরা ২ টি প্রহসনের নির্বাচন দেখেছি। নির্বাচনে প্রহসনের কথা উঠে এসেছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমালোচনায়। আরেকটি জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। সে নির্বাচনটি কী আরেকটি সাজানো নিবার্চন হবে নাকি অংশগ্রহণমূলক হবে তা নিয়ে জনগণের মনে ব্যাপক সংশয়। বাংলাদেশের বড় অংশীদার দেশ হিসেবে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান কী?”
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাউন্সিলের কৌশলগত যোগাযোগ সমন্বয়ক অ্যাডমিরাল জন কিরবি বলেন, “আমাদের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর সব জায়গাতেই স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ থাকা দরকার। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সুযোগ থাকতে হবে। জনগণের প্রত্যাশাকে সম্মান দেখাতে সরকারকে মুক্তমত এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে।”
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জন কিরবি বলেন, “রাজনৈতিক সহিংস পরিবেশে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারেনা। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যে পরিস্থিতি হবে সহিংসতা, হয়রানি এবং ভীতি মুক্ত। প্রার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাতে পারে। আমরা এটাই চাই।”
ব্রিফ্রিংয়ে অপর এক সাংবাদিক ইরানে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ব্যাপক হামলা, ধরপাকড়, মতপ্রকাশে বাধা এবং বিরোধীপক্ষের আন্দোলনের সুযোগ না থাকা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান জানতে চান।
জবাবে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে ইরানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন এই অ্যাডমিরাল বলেন, “২-৩ সপ্তাহ আগেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে এটা স্পষ্ট করে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার অধিকারের পক্ষে সোচ্চার। যেমনটা বাংলাদেশ ইস্যুতেও আমাদের অবস্থান।”
তিনি বলেন, “জনগণকে বিক্ষোভ করার সুযোগ দিতে হবে। কোনো ধরনের হয়রানি, সহিংসতা এবং ভীতি দেখানো ছাড়াই সরকারকে তাদের এ সুযোগ দিতে হবে। বিক্ষোভে কোনো ধরণের প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা যাতে না ঘটে।”
মতপ্রকাশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থানে অনঢ় উল্লেখ করে পেন্টাগন ও স্টেট ডিপার্টমেন্টে একসময় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করা জন কিরবি বলেন “এ ইস্যুতে সারাবিশ্বে আমাদের এ অবস্থান অব্যাহত থাকবে। একটি দেশে যখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ থাকে সে দেশকেই প্রতিষ্ঠিত বলা যায়। বিষয়টি আমরা খুবি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকি।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সব বিষয়ই সব সময় নজর রেখে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকে এবং নজরদারি বেড়েছে আরো অনেকাংশে।