বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাস্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে আসণ্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও বেশ কয়েকবার মন্তব্য করেছে দেশটি। তবে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে সে বিষয়টি হলে গুম হওয়া বিএনপি নেতার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ। এরপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে মুখ খুলতে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বক্তব্যে বিব্রত বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের পরামর্শে সরকার ক্ষুব্ধ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন আজ সোমবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা চাই না রাশিয়া, আমেরিকা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাক করুক, এটা তাদের বিষয় নয়।
বাংলাদেশ আশা করে, বিদেশি কূটনীতিকরা নিয়মের মধ্যেই কথা বলবেন। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের জন্য নিয়ম আছে এবং তারা সেই নিয়ম অনুযায়ী কথা বলবে। আমরা আমেরিকা, পশ্চিমা দেশগুলির কথা বলেছি, অন্যান্য দেশের সম্পর্কেও আমাদের একই বক্তব্য রয়েছে।
বাংলাদেশ নিয়ে সম্প্রতি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার শাহিনবাগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে একটি ঘটনার পর থেকে দুই পরাশক্তি বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। ওই দিন পিটার হাস প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলামের শাহীনবাগের বাড়িতে যান। এরপর কয়েকজন ব্যক্তি বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। নিরাপত্তার কারণে অনুষ্ঠান অসমাপ্ত রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান পিটার হাস। অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হওয়ার সময় বাড়ির সামনে অবস্থানরত একদল লোক তার গাড়ি ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় দ্রুত বেরিয়ে আসেন তিনি। একই দিনে পিটার হাস জরুরি ভিত্তিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করেন এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে পিটার হাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ২০ ডিসেম্বর ঢাকায় রুশ দূতাবাস এক বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, গণতন্ত্র রক্ষা বা অন্য কোনো অজুহাতে বাংলাদেশসহ তৃতীয় কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে রাশিয়া বদ্ধপরিকর। পরিবর্তে, এর পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক টুইটে প্রশ্ন করা হয় যে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করেছে কিনা।
তারপরে রাশিয়ান দূতাবাস ইউক্রেনকে ঘিরে মার্কিন ভূমিকার একটি ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে পাল্টা টুইট করেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোতে এ ঘটনার কথা বলেছেন। শাহীনবাগের ঘটনাকে মার্কিন কূটনীতিকদের কর্মকাণ্ডের প্রত্যাশিত ফল বলে মন্তব্য করেন তিনি। জাখারোভা বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ, যা সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করে, সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন তাদের প্রশ্ন করতে বলেছেন, কেন রাশিয়া এই প্রতিক্রিয়া দিল। তিনি বলেন, আমরা চাই প্রতিটি দেশ নিয়ম, জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী কাজ করুক এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করুক। আমরা একটি পরিপক্ক, স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ—সকলের এটা মনে রাখা উচিত। আমার বক্তব্য রাশিয়া, আমেরিকা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ওদের জিজ্ঞাসা করুন, আমার কাছে এত ঘ্যান ঘ্যান করছেন কেন?’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবার নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে। আ.লীগ সবসময় মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, মানবিক মর্যাদা উর্ধে রেখেছে। এ বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। আমি এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাবেই অনুষ্ঠিত হবে।