বাংলাদেশিদের ভিসা না দিয়ে এবার বড় বিপাকে ভারত

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে শীতলতা সৃষ্টি হওয়ায় কলকাতার অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। গত ৫ আগস্ট থেকে ভারত বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিসা ইস্যু কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে কলকাতার ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক হোটেল, খাবারের দোকান, এবং ট্যাক্সি পরিষেবার ওপর বড় আঘাত এসেছে।

অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা সাধারণত বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য সেরা মৌসুমটি উপভোগ করেন। এই সময়টায় বিপণীবিতান, হোটেল এবং পরিবহন সেক্টর লাভের মুখ দেখে। তবে এবার বাংলাদেশি পর্যটকদের অনুপস্থিতি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় যেসব বাংলাদেশি পর্যটক এখন দেখা যাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই গত জুলাইয়ে ভিসা পেয়েছেন। কিন্তু যারা নতুন করে ভিসা পেতে চাচ্ছেন, তারা এতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এর ফলে শুধু পর্যটকরা নয়, জরুরি প্রয়োজনে যাওয়া ব্যক্তিরাও চরম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন।

এ অবস্থায় কলকাতা-ঢাকা রুটে সরকারি এবং বেসরকারি পরিবহন পরিষেবা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আগামী জানুয়ারিতে কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা একেবারে শূন্য হয়ে যেতে পারে।

পর্যটকদের অভাবে কলকাতার হোটেল, দোকান, এবং ট্যাক্সি চালকদের আয়ের উৎস প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশি পর্যটকদের অনুপস্থিতি তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশি পর্যটকদের ফিরে পেতে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।


আবু সাঈদকে নিয়ে শেখ হাসিনার দাবি কতটুকু সত্য

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তাঁর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শেখ হাসিনার একটি অডিও বার্তা শনিবার আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়।

১ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের এই অডিওতে শেখ হাসিনা বলেন, “আবু সাঈদ গুলি খাওয়ার পর তাঁকে চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি, কিন্তু সাঈদকে নেওয়া হয়নি। চার-পাঁচ ঘণ্টা পর হাসপাতালে নেওয়ার সময়ই তাঁর মৃত্যু হয়।”

তবে ঘটনাস্থল, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন, এবং ময়নাতদন্তের তথ্য থেকে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়।

সংবাদমাধ্যম ও প্রত্যক্ষ প্রমাণ

  • দৈনিক কালের কণ্ঠ ও ডেইলি সান-এর তথ্য অনুযায়ী, আবু সাঈদকে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়।
  • ডেইলি স্টার জানায়, সংঘর্ষের সময় দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
  • হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিনের বক্তব্য অনুযায়ী, হাসপাতালে আনার আগেই সাঈদের মৃত্যু হয়।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন

রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলামের মতে, ছররা গুলির আঘাতে সাঈদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গভীর ক্ষত তৈরি হয় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়।

মামলার তথ্য

১৬ জুলাই রাতেই পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, আহত অবস্থায় সাঈদকে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শেখ হাসিনার বক্তব্যের সত্যতা

উপস্থিত প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত এবং ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই আন্দোলনকারীরা তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। মৃত্যুসনদ অনুযায়ী, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। সুতরাং শেখ হাসিনার দাবি—সাঈদকে চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল—এটি অসত্য।

আবু সাঈদ আহত হওয়ার পর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাই শেখ হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাস্থলের প্রমাণের কোনো মিল পাওয়া যায় না।