বাংলাদেশ এখন রয়েছে বেশ অর্থনৈতিক সংকটে। আর এই সংকটের কারনে দেশের অনেক কিছুই এখন নিয়ন্ত্রনে আনছে সরকার। এ দিকে দেশে এত বেশি পরিমানে অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও সুইস ব্যাংকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ নিয়ে যেন কোন মাথা ব্যাথাই নেই সরকারের।
সুইস ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ টাকা ফেরত আনতে কোনো তথ্য চায়নি—সুইস রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যের পর সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট-বিএফআইইউ বিশ্বের ৭৮টি দেশের সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ ফেরত দিতে সমঝোতা স্মারক সই করলেও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে কিছুই করেনি। তবে পাচারকৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে সে দেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই।
এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউর প্রধান ড. মাসুদ বিশ্বাস গতকাল পত্রিকাকে বলেন, সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে আমরা কোনো চুক্তিতে পৌঁছাইনি। যাইহোক, আমরা সে দেশের এন্টি মানি লন্ডারিং সংস্থার সাথে এই বিষয়ে তথ্য শেয়ার করি। যেহেতু আমরা ইন্টারন্যাশনাল মানি লন্ডারিং অর্গানাইজেশনের সদস্য তাই সেই তথ্য পেতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এখন বিষয়টি সামনে চলে আসায় এবং আমাদের সঙ্গে দেশটির কোনো চুক্তি না হওয়ায় আমরা একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিচ্ছি।
বিএফআইইউ-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, সংস্থাটি বিশ্বের ৭৮ টি দেশের সাথে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ এবং অর্থ ফেরত পাঠানোর জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
তালিকায় সেসব দেশের নাম রয়েছে যা পাচারের ঝুঁকির দিক থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে আলবেনিয়া, আরুবা, কিরগিজস্তান, মোনাকো, সুরিনাম, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতু, গুয়াতেমালা, সেশেলস, অ্যান্ডোরা, লাটভিয়া, টোঙ্গা, প্যারাগুয়ে, কুক দ্বীপপুঞ্জ; যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তেমন বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক সম্পর্ক বা কার্যক্রম নেই।
অর্থ পাচারের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত, সুইজারল্যান্ডে সুইস ব্যাংকের উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সে দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয় বলে জানা যায়। মানি লন্ডারিংয়ের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, তবুও বিএফআইইউ একটি নিষ্পত্তি চুক্তিতে প্রবেশ করেনি। আর কোনো চুক্তি না হলে বিএফআইইউ কীভাবে পাচারের টাকা উদ্ধার করবে—সেই প্রশ্ন উঠেছে এখন বিতর্কের মধ্যেই।
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ন্যাথালি শুয়ার্ড সম্প্রতি বাংলাদেশিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি বলে মন্তব্য করে বিষয়টি তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রদূত অবগত ছিলেন না যে বিআইএফইউ এবং এর সুইস প্রতিপক্ষের মাধ্যমে তথ্য বিনিময়ের কোনো ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এ ধরনের বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে দুই দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের সুবিধা বাড়াতে সুইজারল্যান্ড থেকে আরও কিছু প্রস্তাব এসেছে। সেগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যে নতুন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে ঢাকায় সুইজারল্যান্ড ও তাদের দূতাবাস যোগাযোগ করছে।
গেল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ থেকে লাখো কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে বিদেশে। আর এই পাচার হওয়া টাকার একটি বড় উৎস গেছে সুইস ব্যাংকে। যার ফলে সুইস ব্যাংক নিয়ে এত বেশি তুলকালাম চলছে সবখানে।