Wednesday , November 13 2024
Breaking News
Home / National / বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম কোন দেশ ঋণ শোধের জন্য চাপ দিবে জানা গেল সেই খবর

বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম কোন দেশ ঋণ শোধের জন্য চাপ দিবে জানা গেল সেই খবর

বিশ্বব্যাংকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণ দিয়ে থাকে। তবে সেই ঋণ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে হয়। শ্রীলঙ্কার কথা কম বেশি সবাই জানে। ঋণের দায়ে দেশটি একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সম্প্রতি জানা নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তিনি তার এক বক্তব্যে বলেছেন ঋণ শোধের চাপ শুরু হবে চীন দিয়ে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মেগা প্রকল্পের অর্থায়ন হয় বৈদেশিক ঋণে। এই প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নের হারে, প্রকল্পগুলি ২০৩০ সালেও শেষ হবে না। তবে, সিটিজেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং সিপিডির অনারারি ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন যে এই প্রকল্পগুলির জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ ২০২৪ সাল থেকে শুরু হবে। .

এই অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বৈদেশিক ঋণের গ্রেস পিরিয়ডের দিক থেকে চীন সবচেয়ে এগিয়ে, তারপরে জাপান ও রাশিয়া।

তাই ঋণ পরিশোধের চাপ প্রথমে আসবে চীন থেকে। আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও আসতে পারে। বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের বিগ ২০ মেগা প্রজেক্টস: ট্রেন্ডস অ্যান্ড সিচুয়েশন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পের প্রধান অংশীদার হচ্ছে পরিবহন খাত। বাংলাদেশে চলমান ২০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে ১১টি পরিবহন খাতে। মেগা প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৪৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ। তবে বাংলাদেশের ২০টি মেগা প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থায়ন সাশ্রয়ী হয়েছে বলে আশা করা যায়। এটা অনেক আনন্দের জায়গা। 45টি ঋণ প্যাকেজের মধ্যে পাঁচটি এই প্রকল্পের জন্য অনুদান। চীন থেকে ৩৩টি ভর্তুকিযুক্ত ঋণ প্যাকেজ, দুটি আধা-ভর্তুকিযুক্ত এবং পাঁচটি বাণিজ্যিক ঋণ প্যাকেজ নেওয়া হয়েছিল।

দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ১ দশমিক ১ শতাংশ। এটি ২০২৬ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে। এই হার ২ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে সে সময় দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি কেমন থাকে, অর্থনীতি কতটা ভালো থাকে তার ওপর নির্ভর করবে। তিনি বলেন, বড় প্রকল্পের জন্য রাশিয়া, চীন ও জাপানকে বেশি অর্থ দিতে হবে। এর মধ্যে চীনের ঋণ পরিশোধের সময়কাল বেশ কম।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক ঋণ ১৭ শতাংশের নিচে এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৭ শতাংশের ওপরে। উল্লেখ্য, তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০১৮ সালের পর, দায় উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এবং মেগাপ্রজেক্টের ঋণ পরিশোধের সবচেয়ে বড় অংশ রাশিয়ায় যাবে ৩৬.৬ শতাংশ, তারপরে জাপানে ৩৫ শতাংশ এবং চীনে প্রায় ২১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের সময়সূচির দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম হলেও চীনকে সবচেয়ে বেশি দিতে হয়েছে। বিশাল ধাক্কা সামলাতে কর আদায় বাড়াতে হবে। কারণ কর জিডিপি এখনও ১০% এর নিচে। ‘

দেবপ্রিয় বলেন, ‘প্রকল্পগুলো ২০২৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা; কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সব প্রকল্পের কাজই বহাল থাকবে। ২০টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি প্রকল্প সময়ে সময়ে বাড়ানো হয়েছে। আমি মনে করি ২০২৪ এবং ২০২৬ সালে ঋণ পরিশোধের জন্য আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুরোধ করা ইতিবাচক। এটা ভালো যে সরকার আইএমএফের সাথে আলোচনা শুরু করেছে; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে পশ্চাদপসরণমূলক বক্তব্য উৎসাহব্যঞ্জক নয়। কোনো দেশ শুধু টাকার জন্য আইএমএফের কাছে যায় না। ‘

দেবপ্রিয় বলেন, দুই বিলিয়ন হোক বা আড়াই বিলিয়ন ডলার বা সাড়ে চার বিলিয়ন বা সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার- আইএমএফ থেকে টাকা নিতে হবে। এর ফলে মধ্যমেয়াদে অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন সহযোগীদের এক ধরনের আস্থা অর্জন হবে। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা দেখায় যে তারা যখন আইএমএফের কাছে পৌঁছায় তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকার ৫০ শতাংশ ঋণ নিয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলো তারল্য পাবে না। অন্যদিকে, সেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি, খুব জরুরি না হলে সেগুলো পিছিয়ে দিতে হবে। এবং যেগুলি এগিয়ে চলেছে, কিন্তু খরচ কাঠামোতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, স্পষ্টতই দুর্নীতিগ্রস্ত বা অতিরিক্ত মূল্যায়ন করা হয়েছে, তাদের পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। আর যেগুলো বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে সেগুলোর সময় কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি। ‘

জ্বালানি তেল প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে তেল পাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে যেতে হবে এবং সবুজ শক্তির দিকে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সরকার কিছু নীতিমালা করেছে। জাতীয় কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সেসব পরিকল্পনাকে মধ্যমেয়াদে এনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, আর্থিক নীতি, মনিটরিং নীতি, বাণিজ্য নীতি এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে সমন্বয় করতে হবে। তাদের বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। এসব নীতিমালা দেওয়ার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের। তারা এসব দেখবে।

প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াত্বের বিষয়টি সত্যিই সারা বিশ্বে নজির স্থাপন করেছে। তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়েছিলো। সময় মত সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কা দেশ ছেড়ে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে অন্য দেশে। দেশের অবস্থা খুবই খারাপ অবস্থানে নেমে এসেছে।

About Shafique Hasan

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *