আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশকে খুব বেশি চাপ দিলে শেষ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়ায় কট্টর শক্তির হাত শক্তিশালী হতে পারে এবং ফলস্বরূপ আঞ্চলিক অস্থিতিশীল ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সাম্প্রতিক একাধিক বৈঠকে ভারত এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে। সোমবার (২৮ আগস্ট) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এক প্রতিবেদনে হিন্দুস্তান টাইমস এ দাবি করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত চাপ দেশটিকে চীনের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে। আর তা হলে পুরো অঞ্চলে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করে নয়াদিল্লি।
তবে ভারতীয় পক্ষ নিশ্চিত করেছে যে তারাও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে অতিরিক্ত চাপ দিলে বাংলাদেশে উগ্র ও মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটতে পারে। শেখ হাসিনার সরকার এ পর্যন্ত সফলভাবে এ ধরনের শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞারও হুমকি দিয়েছে তারা।
ভারতের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে চীন। গত ২৩ আগস্ট জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্টের মন্তব্য ভারতকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি অনুযায়ী, শি জিনপিং বলেছেন, বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করতে এবং পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষায় বেইজিং চীনের সঙ্গে কাজ করবে।
বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক।
প্রতিবেদনে আরোও বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে জয়ের দিকে নজর রাখছেন। প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন হিসেবে দেখা হয় তাকে। ভারতবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকার ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের প্রধান বন্দরগুলো ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া জ্বালানি-বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সংযোগ বাড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন ইস্যুতে হাসিনা সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপ বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) উজ্জীবিত করেছে।
বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসনে জয়লাভ করে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলটি কয়েক ডজন আসনে জয়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে,।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েও উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দলটিকে বরাবরই ভারতবিরোধী হিসেবে দেখা হয়েছে। জামায়াত ১০ জুন ঢাকায় বিশাল সমাবেশ করে। ১০ বছরের মধ্যে এটাই ছিল তাদের প্রথম জনসভা। ভারত বিশ্বাস করে যে জামায়াতের শক্তিশালীকরণ চরমপন্থী শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।