যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার (৩০ আগস্ট) আন্তর্জাতিক নিখোঁজ ব্যক্তি প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি এ আহ্বান জানিয়েছে।
মূলত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের প্রস্তাবিত স্বাধীন কমিশনের বিষয়টি মেনে নেওয়ার আহ্বান ছিল।
এইচআরডব্লিউ বলেছে যে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বলপূর্বক গুমের তদন্তের একটি স্বাধীন কমিশনকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত। তবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। পরিবর্তে, নিখোঁজরা নিজেরাই প্রহসনমূলক দাবি করছে যে তারা আত্মগোপনে রয়েছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে এইচআরডব্লিউ বলছে, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশী নিরাপত্তা বাহিনী জোরপূর্বক ৬০০ জনেরও বেশি লোককে নিখোঁজ করেছে। প্রায় ১০০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে, যদিও কয়েকজনকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং আদালতে আনা হয়েছে বা সশস্ত্র সংঘর্ষের সময় মারা গেছে বলে জানা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে।
সংস্থাটি বলেছে, ক্ষমতাসীন দল ও কর্তৃপক্ষের সমর্থকরা বারবার কূটনীতিকদের জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দিয়েছে। সরকার বারবার দাতা দেশ, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা এবং সুশীল সমাজ থেকে জোরপূর্বক গুমের বিষয়টিকে অর্থপূর্ণভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান উপেক্ষা করেছে।
এইচআরডব্লিউ-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, বাংলাদেশ সরকার গুমের বাস্তবতা অস্বীকার করে কারো চোখে ধুলো দিতে পারছে না, বরং গুমের শিকার পরিবারগুলোর দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। গুমের তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে এই নৃশংসতা মোকাবেলায় সরকারের সদিচ্ছা দেখাতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার যদি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর মানবাধিকার বিধিনিষেধ অপসারণে আন্তরিক হয়, তাহলে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জবাবদিহিতা তখনই দেখা যায় যখন সরকার গুমের বিষয়টি স্বীকার করে এবং গুমের অভিযোগের স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে তদন্ত করে।
যদিও সরকার বারবার বলেছে গুমের বিষয়টি সমাধানের পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব গুমের সঙ্গে জড়িত নয়। এমনকি জাতিসংঘের সহায়তায় অন্তর্ধান তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশেষ সংস্থা গঠনের বিষয়টিও সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে, ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, মার্কিন সরকার বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। র্যাবের বিরুদ্ধে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের আগস্টে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের মামলা তদন্তে সহায়তার প্রস্তাব দেন।
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে নিখোঁজের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে প্রতি বছর ৩০শে আগস্ট পালিত হয় আন্তর্জাতিক নিখোঁজ ব্যক্তি প্রতিরোধ দিবস।