বিশ্ব ব্যাংক মূলত একটি একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা যা বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের উন্নয়নের জন্য দিয়ে থাকে নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা আর ঋন। আর সহায়তা নেয়ার সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নামও।এ দিকে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ তিন দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে আজ রাতে ফেরার কথা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপন করতে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন।
সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কয়েকজন মন্ত্রী ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসব বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের এমডি ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আরও সহায়তার আশ্বাস দেন।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য বিশ্বব্যাংকের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির গতিপথ অনেক দেশের জন্য অনুপ্রেরণা। এটি উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে। রেকর্ড সময়ে দারিদ্র্য কমিয়েছে বাংলাদেশ। এটি দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনে অগ্রণী ও উদ্ভাবনী ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বব্যাংক বিগত পাঁচ দশক ধরে একটি অবিচল অংশীদার এবং বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভ্যান ট্রটসেনবার্গ গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং ২০২০-২০২২ সালের মধ্যে জলবায়ু ঝুঁকি ফোরামের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
ভ্যান ট্রটসেনবার্গ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশ সাহসী ও উদ্ভাবনী পন্থা অবলম্বন করে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বিশ্বব্যাপী আবির্ভূত হয়েছে, ১৯৭১ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়জনিত মৃত্যু ১০০ গুণেরও বেশি কমিয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৭০০ কিলোমিটারের বেশি উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসনে সহায়তা করেছে। ১,০০০ সাইক্লোন শেল্টার যা স্কুল হিসাবে কাজ করে এবং ৫৫০ কিমি পাকা রাস্তা যা আশেপাশের গ্রামের সংযোগে অবদান রাখে।
ভ্যান ট্রটসেনবার্গ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। যা সাধারণত প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া তিনি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তিনি প্রায় ১.১ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদারতার জন্য ধন্যবাদ জানান। বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গা জনসংখ্যা এবং স্বাগতিক সম্প্রদায়ের মৌলিক চাহিদা পূরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ৫৯০ মিলিয়ন অনুদান দিয়েছে।
সফরকালে তিনি অর্থমন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার।
ভ্যান ট্রটসেনবার্গ বলেন, ইউক্রেনে মহামারী এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাবসহ বৈশ্বিক ধাক্কার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। এছাড়া উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে চ্যালেঞ্জ দূর করতে সহায়তা করছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই লক্ষ্যে, আমরা বেসরকারি খাতের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি উন্নত করতে এবং জলবায়ু ঝুঁকি কমাতে আরও সহায়তা করব।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যংকের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত পেয়েছে নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা। আর ভবিষ্যতে এই সহায়তা দেবার আশ্বাস দিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান। আর এটা বাংলাদেশের জন্য বড় একটি সুযোগ।