অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের স্থান করে নেন তারকারা কিন্তু এর মূলে থাকে ভক্ত ও দর্শকরা। যদিও দর্শকদের কাছে নিজেকে প্রমাণের মাধ্যমে তাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন তারকা।তবে তাদের ভাল লাগার বিষয়টি সবার প্রথমে। কারণ তারা অভিনয় পছুন্দ না করলে যতোই ভাল অভিনেতাই হোক না কেন টিকে থাকতে পারবেন না কখনো। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখিকা মিলি সুলতানা হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত “খুফিয়া” নিয়ে চারদিকে শোরগোল চলছে। আমাদের সুঅভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন প্রশংসিত হয়েছেন সর্বমহলে। হিন্দি ফিল্মে অভিষেক ঘটায় বাঁধন নিজেও “খুফিয়া” নিয়ে খুশিতে বাকবাকুম করছেন। বিশাল ভরদ্বাজ টিজার দিয়ে যতটা আগ্রহের সৃষ্টি করেছেন পুরো ছবিতে কিন্তু সেই আগ্রহ স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। গল্পটা খুব ফ্ল্যাট মনে হয়েছে। ছবির শুরুতে টাবুর মাদকতাময় কণ্ঠের বর্ণনায় উঠে এলো অক্টোপাস (বাঁধন)। বোঝা গেল টাবু আর হিনা একে অপরের হরিহর আত্মা। টাবুর কণ্ঠে শোক ঝরছিল তার অক্টোপাসের (আজমেরি হক বাঁধন) জন্য। গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার টাবুর মধ্যে যৌন জাগরণ ঘটেছে বাঁধনকে নিয়ে। স্বামীর সাথে ডিভোর্সের পর তরুণ ছেলেকে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন টাবু। ভারতের বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (RAW)-এর স্বেচ্ছাসেবী গুপ্তচর হিনা রেহমানের গলায় কাঁটাচামচ গেঁথে দিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত সাকলাইন মির্জা (শতাফ ফিগার)। বাঁধনের স্ক্রিনটাইম খুব অল্প ছিল। টুকরো টুকরো ঘটনা স্মৃতি রোমন্থনের মাধ্যমে তার স্ক্রিনপ্লে চলেছে। আমার মনে হয়েছে বাঁধনকে আলী ফজলের স্ত্রী ওয়ামিকা গাব্বির চরিত্রে কাস্ট করা উচিত ছিল। কারণ গাব্বির চাইতে বাঁধনের অভিনয় ক্ষমতা বেশি।
সমকামী চরিত্রে রোল প্লে করে আমাদের সুঅভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধনের জীবন যেন ধন্য হয়ে গিয়েছে। সবাইকে সব চরিত্রে ভালো লাগেনা। “গুটির” সেই ইয়াবা পাচারকারী বাঁধনকে দর্শক কখনো ভুলবেনা। মলদ্বারে ইয়াবা ঢুকিয়ে সেটা আবার বাথরুমে গিয়ে শরীরের সর্বশক্তি খাটিয়ে বের করে আনা আজমেরি হক বাঁধনের যন্ত্রণাকাতর মুখটা গোচরে অগোচরে আমার মনে উঁকি মারবেই। শুধু একা আমার মনে নয়, দর্শকদের মনেও উঁকি মারবে। যারা তার ভক্ত তারা সমকামী চরিত্রে তাকে অবশ্যই পছন্দ করবেনা- এটাই স্বাভাবিক। শুনলাম বাঁধন নাকি দর্শকদের পছন্দের বিষয়টা পাত্তা দিতে চাচ্ছেন না। পাবলিককে বকা দিচ্ছেন সংকীর্ণ মানসিকতা বলে। বাঁধন একটু বেশি ওভার কনফিডেন্ট হয়ে গিয়েছেন মনে হচ্ছে। বাঁধনের মধ্যে কেউ কেউ অ্যারোগেন্ট হ্যাবিট দেখতে পাচ্ছেন। আরে, আপনি মানুষকে সংকীর্ণ মানসিকতার বলে ক্ষোভ ঝাড়বেন কেন? আপনাকে ভালোবাসে বলেই আপনার ভক্তরা পর্দায় আপনার সমকামিতাকে পছন্দ করেনি। ছবিতে টাবুর বেড পার্টনার হয়ে অতো উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখার মত অভিনয় আপনি আজমেরি হক দেখাতে পারেননি। ইনফ্যাক্ট, আপনার রোল ছিল গুরুত্বহীন। বরং আপনার চেয়ে ওয়ামিকা গাব্বিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যার অভিনয়ে ছিল প্রচুর খুঁত। ছবিতে আলী ফজল ও ওয়ামিকা গাব্বির বিরক্তিকর একটা শয্যাদৃশ্য আছে।
টাবুর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে তার যৌ/ন জাগরণ উস্কে দেন বাঁধন। প্রথমে টাবু খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে উঠলেও পরমুহূর্তে আমরা দেখতে পাই, তারা দুজন বিছানা শেয়ার করেছেন। অর্থ্যাৎ পারফেক্ট সমকামী জুটি। ভালো লাগেনি এটা। “খুফিয়া” আমার কাছে গতিহীন মনে হয়েছে। কাহিনী অবিন্যস্ত, এলোমেলো। বিশাল ভরদ্বাজের কাজ লোয়ার স্কেলের মনে হয়েছে। দর্শকদের জন্য ভালো ট্রিট দিতে পারেননি তিনি। দৃশ্যম-১, দৃশ্যম -২, এবং আন্ধাধুন হায়দারের শৈল্পিক টাবুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি খুফিয়াতে। একটা দৃশ্যের কথা উল্লেখ করতে হয়, যখন সাকলাইন মির্জা বাঁধনের গলায় কাঁটাচামচ গেঁথে দেন তখন বাঁধনের এক্সপ্রেশন যেমন হওয়া উচিত ছিল, সেটা তিনি হানড্রেড পার্সেন্ট দিতে পারেননি। গলা দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরছিল। আর তিনি সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু সামনে দাঁড়ানো হত্যাকারী মির্জার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার দরকার ছিল তার। বাঁধনের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে সমকামীর রোল প্লে করে তিনি তার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজেকে মহিমান্বিত করার ঠুনকো সুখে বিভোর তিনি। তবে “যত তত বর্ষেনা” বলে একটা কথা আছে। সিরিয়াস এই পরামর্শটা বাঁধনের জন্য রইলো। “গুটি” র ইয়াবা পাচারকারী এবং “রবীন্দ্রনাথ এখানে কোনদিন খেতে আসেননি”র ডাইনীরূপী সেই বাঁধনকে দর্শকরা বেশি বেশি দেখতে চায়। “খুফিয়া”র লেসবিয়ান বাঁধনকে একটুও পছন্দ হয়নি। ডিসগাস্টিং।