দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাঁচার আশা অনেকটা হারিয়েই ফেলেছিলেন নুর হোসেন। তবে তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন এমনও একজন আছেন, যে তাকে নিজের জীবনের থেকেও অধিক ভালোবাসেন। আর সে অন্য কেউ নয়, তারই সহধর্মিনী রুমা বেগম। স্বামীর এই বিপদের দিনে নিজের জীবনের কথা না ভেবে একটি কিডনি দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি।
স্বামীর প্রতি এমন বিরল ভালোবাসায় ওই নারীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকাবাসী। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী দুজনই ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রুমা বেগম লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের মুগলিবাড়ী এলাকার নুর হোসেনের (৩৫) স্ত্রী।
গৃহবধূ রুমা বেগম বলেন, আমি নিজ ইচ্ছায় স্বামীকে কিডনি দিয়েছি। আমি মনে করতাম বাঁচলে দুজনে বাঁচবো আর মরলে দুজনে মরবো। স্বামীকে নিজের কিডনি দিতে পেরে আমি খুবই খুশি।
জানা গেছে, ১৪ বছর আগে উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের মুগলিবাড়ী গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে নুর হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উফারমারা মাছির বাজার এলাকার সহিদার রহমানের মেয়ে রুমা বেগমের। বিয়ের ১০ বছর পর নুর হোসেনের কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে। পরে রংপুর সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয় মাস ডায়ালাইসিস করান। ভারতে গিয়েও চিকিৎসা নেন। পাঁচ মাস আগে নুর হোসেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান নুর হোসেন।
সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানান, তার দুটি কিডনিই অচল হয়ে গেছে। রোগীকে বাঁচাতে হলে কমপক্ষে একটি কিডনির ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে তারা বিভিন্ন কিডনি ব্যাংকে যোগাযোগ করেন। তবে কিডনি সংগ্রহ করতে পারেননি।
এ অবস্থায় রীতিমতো হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন নুর হোসেন। তবে সৌভাগ্যবসত স্ত্রী রুমা বেগমের কিডনির সঙ্গে তার কিডনি মিলে যাওয়ায় এ যাত্রার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন নুর হোসেনের। এদিকে স্বামীর প্রতি রুমার এমন ভালোবাসা থেকে মুগ্ধ হয়েছেন নেটিজেনরা।