বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে জনমত তৈরি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরকারবিরোধী আ’ন্দোলন করার পথে নামতে চায় বিএনপি। রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার চিন্তা করলেও সেটার চেষ্টা না করাই ভালো হবে। তারা বিএনপিকে নিষ্ফল আন্দো’লনের পথে না হেটে ফের আইনি পথে হাঁটার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন।
দুর্নীতির ২ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দুই বছর কা’রাভোগের পর প্যারোলে মুক্তি পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে তাকে কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সব সময় বিদেশে তার চিকিৎসার দাবিতে থাকা বিএনপি মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু এটা কি শুধুই চিকিৎসা করার জন্যই দাবি? অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া কারাদন্ড হওয়ার পর তিনি কারা অভ্যান্তরে থাকার পরেও বিএনপি আন্দো’লন করে তাকে মুক্তি দিতে ব্যর্থ হয়। আইনিভাবেও হেরেছে দলটি।
গত ১৩ নভেম্বর তৃতীয় দফায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার বিদেশে চিকিৎসা ও মুক্তির পুরানো দাবিতে আবারো আন্দো’লনে দল। এবার দাবি স্থায়ী মুক্তির। তবে আইনি পথে হাঁটতে চায় না তারা। দলটির নেতারা বলছেন, তার চিকিৎসা ইস্যুতেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের দিকে যেতে চায় দল।
নেতাদের এমন বক্তব্যই পরিষ্কার নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসা ইস্যুকে পুঁজি করে সরকারবিরো’ধী আন্দো’লন চাঙা করতে চায় বিএনপি। সে অনুযায়ী ৮ দিনের সিরিজ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। অতীতে মুক্তি আন্দো’লন করতে ব্যর্থ দলটি আবারও নেত্রীর মুক্তি ও সরকার পতনের হুঁশি’য়ারি দিচ্ছেন। যদিও সরকারের নির্বাহী আদেশে ১৮ মাস ধরে মুক্ত খালেদা জিয়া। নিচ্ছেন পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসাও।
দলটির নেতাদের দাবি, এ ইস্যুতে সরকারবিরো’ধী জনমত তৈরি হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান রাজধানীতে এক সমাবেশে বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মানুষ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। মানে যে কোনো মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে সরকারবিরো’ধী আন্দো’লন তীব্রতর হবে।
তবে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ বলছেন ভিন্ন কথা। তার প্রত্যাশা আদালতে গেলে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ মিলতে পারে। তিনি বলেন, হাইকোর্টে যাওয়া উচিত বলে আমার মত। সেখানে গিয়ে একটা জামিন নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়া উচিত। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের স্বপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি। যদিও আদালতের প্রতি তাদের আস্থাহীনতার কথা জানিয়েছেন বেগম জিয়ার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বহু বার আদালতে গিয়েছিলাম এবং মেডিকেল রিপোর্টও আদালতে এনে দেখিয়েছি কিন্তু নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের কারণে আমরা আদালত থেকে সে রকম আদেশ পাইনি।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, চিকিৎসা ইস্যুতে বিএনপি- আওয়ামী লীগ দুই দলেরই উচিত রাজনীতি না করা। অর্থাৎ চিকিৎসা ইস্যু নিয়ে কোনো পক্ষেরই রাজনীতি করা সমীচীন নয়।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম যিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিষয়টিকে ধোঁয়াশার মাঝে রেখে রাজনীতি করে যাওয়া অন্যান্য নেতাদের জন্য পক্ষপাতমূলক। আমার পছন্দ না হোক বা হোক, ভালো হোক বা খারাপ হোক, সরকারের উচিত রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে এমন ব্যক্তিত্বকে ভিন্ন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বেগম জিয়া মুক্তি চেয়ে যে আপিল করেছিল সেটা গত ৩ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে পড়ে রয়েছে। এদিকে, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে গেল ২৫ নভেম্বর হতে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে পারে সেভাবেই আন্দোলন করছে দলটি। দু-একদিনের মাঝে তারা ফের কঠোর কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে এমন বিষয়েও হুঁ’শিয়ারিও দিয়েছে তারা।