বহুতল ভবন থেকে এক গৃহবধু লাফ দিয়েছেন বলে পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে। ভুক্তভোগী গৃহবধু সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। পারিবারিক কারনে তিনি এমন কাজ করেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছেন প্রশাসন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগীর নারীর পরিবার যে বর্ননা দিয়েছেন তাতে এমটাই ধারনা করছেন কর্তব্যরত প্রশাসন।
রাজবাড়ী শহরের বাজারে বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে লাকী আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূর প্রয়ান হয়েছে। তিনি সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য। রাশিদুল হক অমিরের স্ত্রী। গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় একটি জবানবন্দি দেয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা লাকির প্রয়ানের খবর নিশ্চিত করেছেন। তারা জানায়, সে (লাকি) একটি উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহনন করেছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা ভবনের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তারা একটি শব্দ শুনতে পান এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ভবন থেকে চিৎকার শুনে এগিয়ে গিয়ে এক মহিলাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। প্রয়াত নারীর চাচা লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন, আমরা দ্রুত নিচে গিয়ে দেখি লাকী পড়ে আছে। তাকে প্রথমে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার প্রয়ান হয়। পুরো ঘটনায় আমরা হতবাক। আমি কিছু বলতে পারি না। লাকি এমন কাজ করবে তা আমরা ভাবতে পারি না।
প্রয়াত লাকি আক্তারের মা ইসমত আরা বেগম অভিযোগ করেন, ১০ বছর আগে লাকির সঙ্গে অমিরের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই অমির নিষিদ্ধদ্রব্য সেবন করে নির্যাতন করত। সে প্রায়ই গভীর রাতে ম দ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যৌতুকের দাবি করত। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এ নিয়ে পরিবারে কয়েকবার মীমাংসা হয়েছিল। প্রয়াত গৃহবধু মেয়ে আফরিন জান্নাতুল হক (৮) জানান, ময়লা পরিষ্কার করা নিয়ে বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া হতো। আজ মা বাইরে থেকে এলে বাবা বারবার পা ধুতে বলে। আম্মু পা ধোয়ার পরও আম্মুকে আবার পা ধুতে বলে। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর বাবা বাথরুমে ঢুকলে মা স্যান্ডেল নিতে যাচ্ছে বলে বেরিয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরেই শুনলাম আমার মা ৬ তলা থেকে লাফ দিয়েছেন। রশিদুল হক অমি ও লাকী আক্তারের দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ছেলের বয়স ২ বছর।
তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাশেদুল হক অমির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ আবু হোসেন জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে একজন রোগী আসেন। বহুতল ভবন থেকে পড়েছিলেন বলে জানতে পেরেছি। আমি তার গায়ে কোনো বাহ্যিক আঘাত দেখিনি এবং কোনো রক্তপাতও হয়নি। আমরা অবিলম্বে ইসিজি করেছিলাম এবং ইসিজি রিপোর্ট স্বাভাবিক ছিল এবং আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে তার অভ্যন্তরীণ ক্ষতি হয়েছে। আমরা তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করি। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে পারিবারিক কোনো কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে প্রয়ানের কারণ জানা যাবে। এরপর অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
উল্লেখ্য, বহুতল ভবন থেকে এক নারী লাফিয়ে পরে প্রয়াত হয়েছেন। গৃহবধুর ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়া এমন ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা অনেকটাই হতবাক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ভুক্তভোগীর স্বামী একজন নিষিদ্ধদ্রব্য সেবনকারী ছিলেন এবং তিনি প্রায়ই গভীর রাতে এসে তাকে নির্যাতন করতেন। দীর্ঘদিনের এই পারিবারীক কলোহের জের ধরেই এই পথ বেছে নিয়েছেন বলে ধারন করছেন প্রশাসন।