প্রেম মানে না কোন বয়ষ। প্রেম মানে না কোন বাধা। এসব কথা গুলো সিনেমার সংলাপ হলেও বাস্তবে রয়েছে এসব কথার অনেক মিল। আর সেই মিলটাই যেন আবারো প্রমান হয়ে গেল দেশের একটি বর্তমান ঘটনায়। গেল বেশ কিছুদিন ধরে তোলপাড় চলছে অসম বয়সী দুজনের প্রেম আর বিয়ে নিয়ে।
ফেসবুকে একে অপরকে চেনার ৬ মাস পর নাটোরে বিয়ে করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও শিক্ষিকা। তবে সব নেতিবাচকতাকে পেছনে ফেলে বিয়ের প্রসঙ্গ প্রকাশ করেছেন তারা। গেল রোববার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে এ ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তারা বর্তমানে নাটোর শহরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। দম্পতি মামুন হোসেন (২২) ও খায়রুন নাহার (৪০) নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বাসিন্দা। মামুন হোসেন নাটোর এনএস সরকারী কলেজের একজন ছাত্র।
মামুন হোসেন বিয়ের পর বেশ কিছুদিন শেয়ার ব্যবসা শুরু করেন বলে জানা গেছে। একই সময়ে, এটি পাট, ধান, গম, সরিষার মতো অপচনশীল কৃষি পণ্য নিয়েও কাজ করছেন তিনি। অন্যদিকে, তার স্ত্রী খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
কলেজছাত্র মামুন জানান, প্রায় সাত মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়। এ বিষয়ে কেউ যাই বলুক না কেন আমি আমার পরিবারকে সংগঠিত করেছি। কিন্তু আমি তার কলেজের ছাত্র নই। আমি নাটোরের এনএস সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর আমার স্ত্রী মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজ, খুবজীপুরের সহকারী অধ্যাপক। আমাদের বিয়ের সময় তিনি প্রভাষক ছিলেন। প্রায় দুই মাস আগে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান।
মামুন আরও বলেন, “শুরুতে আমাদের পরিবার আমাদের গ্রহণ করেনি, সম্প্রতি কিছু দিন আগে আমাদের পরিবার আমাদের গ্রহণ করেছে। এখন আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি বিষণ্ণতা থেকে মুক্ত। আমি যা বুঝি তা হল বয়স কোন ব্যাপার না, যদি আমি কারো সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই অনেক নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, আমি মনে করি মন্তব্য কখনই গন্তব্যকে থামাতে পারে না। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকব।”
তিনি আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ সবার কাছে দোয়া চাই। আমরা যে কাজটি করছি তা নিজেদের সিদ্ধান্তেই করছি। আমি সকলের কাছে প্রার্থনা করতে চাই যেন ভবিষ্যতে কেউ এই বিষয়ে নেতিবাচক কিছু বলতে না পারে।”
খায়রুন নাহার বলেন, আমরা ১১ মাস আগে দেখা করেছি। আমার বিয়ে হয়েছে ৬ মাস আগে। অনেকে এটাকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন আবার অনেকে নেতিবাচকভাবে নিচ্ছেন। তার পরিবার আমাকে গ্রহণ করেছে। তার পরিবার আমাকে গ্রহণ না করার কথা, কারণ তার ছেলের সাথে আমার বয়সের পার্থক্য রয়েছে। তারপরও তার ২ বোন, বাবা-মা আমাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু আমরা পরিবারে সমস্যা।”
তিনি আরও বলেন “অনেকে খুব নেতিবাচক কথা বলছে, আমার সহকর্মীরা কেউ ভাল কথা বলছে এবং কেউ খারাপ কথা বলছে। যার যা মাইন্ড। অনেকে মনে করেন কাজের খাতিরে লোকটা আমাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, এসব কথা অনেকেই বলছে। এ কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায়, কিছু করা যায় না। তবে আলহামদুলিল্লাহ সে আমাকে ভালো রাখতে পারবে।”
খায়রুন নাহার আরো বলেছেন “যে যাই বলুক না কেন, ও আমার যত্ন নিচ্ছে। আমার বিশ্বাস আমাকে সারাজীবন ভালো রাখবে। ও আমাকে কোনো কিছুতেই কষ্ট দিতে দেন না, এর মানে আরও বেশি। আমি একজন শিক্ষক হতে পারি, আমি কম বুঝি কিন্তু সে অনেক বোঝে। ও আমাকে বোঝায় মানুষের জন্য আমরা কেন খারাপ থাকবো।”
উল্লেখ্য, এ দিকে ৪০ বছর বয়সী শিক্ষিকাকে বিয়ে করে আলোচনার জন্ম দেয়া মামুন তোয়াজ করছেন না সমাজকে। সব কিছুর উর্দ্ধে তার ভালোবাসাকে রাখতে চাইছে সে। আর সেই লক্ষ্যেই ঐ নারীর সাথে সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি।