ঢাকার কেরানীগঞ্জে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে রাসেল হাওলাদার (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব উদ্দিন রাব্বি ও তার সহযোগীদের রাতভর নির্যাতনে বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে মারা যান তিনি।
রাসেলকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আফতাব উদ্দিন রাব্বি নিজেই অন্যদের সতর্ক করে ভিডিও প্রকাশ করেছেন। যেখানে দেখা যায়, নির্যাতনের একপর্যায়ে রাব্বিকে ‘আব্বা’ ডেকে বাঁচার আকুতি জানায় রাসেল। তবুও রক্ষা মেলেনি। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, রাসেল বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাসানচর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদারের ছেলে। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
চরকালীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মমিনুল হক জানান, কালীগঞ্জ এলাকায় রাব্বির একটি টর্চার সেল রয়েছে। গত মঙ্গলবার সারারাত সেখানে রাসেলকে নির্মম নির্যাতন করে রাব্বি ও তার সহযোগীরা।
ওই নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে রাব্বি লেখেন, ‘রাসেলরে দেখে যদি কেউ না বুঝে, তাইলে রাসেলের জায়গায় আবার কেউ থাকবে।’
ভিডিওতে দেখা যায়, নগ্ন অবস্থায় রাসেলকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন। রাসেল হতবাক হয়ে রাব্বিকে বলছে, ‘আব্বা আব্বা, রাব্বি আব্বা, আমাকে বাঁচাও।’
মমিনুল হক জানান, রাব্বির বাবা বাসের উদ্দিন শুভাধ্যক্ষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। রাব্বির নেতৃত্বে তার সহযোগীরা কেরানীগঞ্জে মাদক ব্যবসা করে। রাসেল এবং রাব্বি বন্ধু। রাসেল চরকালীগঞ্জ ও তেলঘাট এলাকা থেকে রাব্বির নামে চাঁদা আদায় করত।
তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তেলঘাট এলাকার পারভীন টাওয়ারের নিচতলায় রাব্বির অফিসে ওই টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ চলে। সারারাত নির্যাতনের পর বুধবার সকালে রাসেলকে বস্তায় ভরে চরকালীগঞ্জের নিজ বাড়িতে ফেলে রেখে যায় রাব্বির সহকারীরা। পরে রাসেল মারা গেলে রাব্বির পরিবার তাকে খেজুরবাগ কবরস্থানে দাফন করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় রাসেলের বাবা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রাব্বির মামলায় মিরেরবাগ বাস্তুহারা এলাকার আলমগীর হোসেন ঠান্ডু, আমির হোসেন, কালীগঞ্জ পশ্চিমপাড়ার মো. সজিবসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রাসেলের বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমার ছেলে জীবনের শেষ মুহূর্তে আব্বা বাঁচাও বলেও রক্ষা পায়নি। শেষে বস্তায় ভরে বাসায় দিয়ে আসে। রাসেল মারা যাওয়ার পর তার লাশ দাফনের জন্য চাপ দেয় রাব্বির বাবা আওয়ামী লীগ নেতা বাসের উদ্দিন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাহাবুব আলম বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।