সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। তার বক্তব্যে বন্ধু রাষ্ট্র ভারতও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে এবং তাদের হাইকমিশন থেকে বিবৃতিও দেওয়া হয়। আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রীরা এ বক্তব্যকে দলের নয় বলে জানান। নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন এটি বিকৃতি করা হয়েছে তিনি এভাবে বলেননি। মোমেনের ব্যাখ্যাতেও অস্বস্তি কাটেনি আওয়ামী লীগে এ বিষয়ে ভিন্ন কথা বলছে দলের শীর্ষ নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের আলোচিত মন্তব্য নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেতরে এখনো অস্বস্তি কাজ করছে।
দলটির নেতাদের অনেকেই বলছেন, সমালোচনার মুখে মোমেন সাংবাদিকদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু তাতেও তারা সন্তুষ্ট নয়।
দলের ভেতরে ও বাইরের বিভ্রান্তির অবসান হয়নি বলে মনে করছেন তারা। মোমেনের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী।
১৮ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতকে অনুরোধ করার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তৃতা দেওয়ার পর তা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরেমোমেন ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওই বক্তব্য পুরোই অস্বীকার করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অস্বস্তি
যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এ বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। তবে এখনো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অস্বস্তি বিরাজ করছে।
দলের মাঠ পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, সমালোচনার মুখে মোমেনের এই ব্যাখ্যা বিভ্রান্তি বাড়িয়েছে।
রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য যেটুকু প্রচার হয়েছে, তার আগে বা পরে কোনো পটভূমি এবং অন্য কোনো বক্তব্য আছে কিনা- সেটা জানতে না পারায় তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
আসাদ বলেন, “বক্তৃতা প্রচারের আগে বা পরে কোনো প্রেক্ষাপট না থাকলে বক্তৃতাটি আমাদের জন্য অস্বস্তিকর এবং এ ধরনের বক্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি অন্য কোনো পটভূমিতে এ বক্তব্য দিয়ে থাকেন, সে প্রেক্ষাপট উল্লেখ না করে বিবৃতি প্রচার করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
আরো কয়েকটি জেলা বগুড়া, সিলেট, যশোর এবং চট্টগ্রাম থেকেও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা বিরোধী দল বিএনপি বিভিন্ন সময়ে ভারত ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়েছে। গত দুই নির্বাচন নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
এমন পটভূমিতে আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা টিকিয়ে রাখতে তিনি ভারতকে অনুরোধ করেছেন। তখন সরকার বিরোধীরা আরও বিভ্রান্তি ছাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা।
সমালোচনার মুখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা ব্যাখ্যা করলেও জনগণ তা বিশ্বাস করবে কিনা তা নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে সংশয় রয়েছে। সেজন্য তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা চাইছেন। এনিয়ে দলটির ভেতরে মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যেও অস্বস্তি কাটেনি।
তাদের অনেকেই মনে করেন, ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন, ইতিমধ্যে তাদের দল বা সরকারের ক্ষতি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্যে আমি খুশি নই এবং আমার এলাকার নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়াও একই। এছাড়া এ বক্তব্য সরকার বা আওয়ামী লীগের নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দায় আওয়ামী লীগ ও সরকার নেয়নি।
১৮ আগস্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে সিনিয়র মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ওই বক্তব্য মোমেনের একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে।
দলের আরেক নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, মোমেন আওয়ামী লীগের নন।
তারা তাদের দলের এমন অবস্থান তুলে ধরায় মোমেনের এমপি এবং মন্ত্রীপদে থাকা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান অবশ্য বলেন, ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নেওয়া হবে।
এমনকি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও বেশ কয়েকজন নেতা তাদের ক্ষোভ বা অস্বস্তির কথা বলেছেন।
‘লালকুঠি-নীলকুঠি ষড়যন্ত্র করে সরকারে আসেনি আওয়ামী লীগ’
অবশ্য মোমেনের বিরুদ্ধে দলের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে, এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিনিয়র মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি অস্বস্তিকর। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভুল বুঝতে পেরেছেন বলে তারা মনে করছেন।।
তিনি বলেন, ‘তাঁর (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) কোনোভাবেই এটা বলা উচিত হয়নি।’
ড. রাজ্জাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি গণমানুষের দল। কোনদিনই কোন নীলনক্সা করে বা লালকুঠী-নীলকুঠী ষড়যন্ত্র করে বা কোনো অসাংবিধানিক শক্তির সাথে আঁতাত করে আওয়ামী লীগ কখনো সরকারে আসে নাই এবং দেশ পরিচালনা করেনি।’
‘এছাড়া আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই ওই দল বিদেশীর সহায়তায় ক্ষমতায় আসবে বা টিকে থাকবে- এটা হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন ড.রাজ্জাক।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন বলে তারা আশা করেন।
আওয়ামী লীগের আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, গত কয়েক দিনে এ নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা কমেছে।
তিনি মনে করেন, তাদের দলের নেতৃত্ব থেকে বিষয়টাতে বেশি প্রতিক্রিয়া না দেখানো হলে দলের ভেতরেও অস্বস্তি কেটে যাবে।
প্রসঙ্গত, পররাষ্টমন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয় নিয়ে দলের ভিতরে অস্বস্তি থাকলেও তাকে সরানো্র কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে শীর্ষ নেতারা। তারা মন্তব্য করেছেন বিষয়টি নিয়ে নিজের ভুল তিনি বুঝতে পেরেছেন ভবিষ্যতে এমনটা করা থেকে বিরত থাকবেন।