সীতাকুন্ডের অগ্নিকান্ডে প্রয়াতদের বাড়িতে চলছে বিলাপ। মুহূর্তের মধ্যেই সেই অগ্নিকান্ডে ঝরে পড়ল অনেক তাজা প্রাণ। ঘটনার ভিডিও করতে বা দেখাতে গিয়েও আহত ও প্রয়াত হয়েছেন ভাগ্যপীড়িত মানুষ। আর তেমনি ঘটেছে ফেনীর ফুলগাজীর শাহদাত উল্যাহ মজুমদারের ভাগ্যে। বউকে ফোন কলে ভিডিও দেখাচ্ছিলেন আর তখনি বিস্ফরণে প্রয়াত হন শাহাদাত উল্যাহ।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে প্রয়াত ফেনীর ফুলগাজীর শাহদাত উল্লাহ মজুমদারের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
পরিবারের একমাত্র কর্মজীবী ছেলের মৃত্যুতে বাবা-মা বাকরুদ্ধ। আড়াই মাস বয়সী শিশুটি তার বাবার জন্য অপলক দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছে। পথিমধ্যে স্ত্রী আয়েশা ও স্বজনরা বিলাপ করছেন। এক পলক দেখতে সারি সারি বাড়ির পথে প্রতিবেশীরা। এমন চিত্র এখন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ম/র্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আনন্দপুর মজুমদারের বাড়িতে।
ফেনী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শিফট ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেন। নিহত শাহদাত ফুলগাজী আনন্দপুরের আমিন উল্লাহ মজুমদারের বড় ছেলে।
পরিবার ও স্বজনরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাড়ি ফিরে শনিবার সকালে কাজে ফেরেন। ডিউটি শেষ করে বাসায় যান। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তিনি ডিপোতে এসে পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। রোববার (৫ জুন) দুপুরে স্বজনরা জানতে পারেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার নিথর দেহ শনাক্ত করা হয়েছে। খবর পেয়ে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছোট ভাই ও স্বজনরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নিথর দেহ নিশ্চিত করেন।
এদিকে গ্রামের বাড়িতে নিথর দেহ দাফনের প্রক্রিয়া চলছে। তিন ভাই বোনের মধ্যে শাহাদাত মেঝা। বছর দুয়েক আগে শাহদাতের বিয়ে হয়। তার আড়াই মাসের একটি মেয়ে রয়েছে।
প্রয়াতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, শাহদাত ভালো ছেলে ছিল। কারো সাথে বিরোধ ছিল না। এবার তিনি বাড়িতে এসে বলেন, এলাকার কিছু বেকার যুবককে তাদের কন্টেইনার ডিপোতে চাকরির সুযোগ করে দেবেন। কিন্তু তা হয়নি।
প্রয়াতের মা শাহানা আক্তার জানান, শনিবার রাতে শাহদাত আমার ও ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে। সেই সময় ভিডিওতে দেখা যায় সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লেগেছে। এ সময় কনটেইনার ডিপোতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটলে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনেক যোগাযোগ করেও পেলাম না। রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে শাহদাতের নিথর দেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে আমার ছোট ছেলে ও স্বজনরা তাকে খুঁজতে হাসপাতালে গিয়ে শাহদাতের নিথর দেহ শনাক্ত করেন।
আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে শাহদাত উল্লাহ মজুমদারের প্রয়ানের খবর পেয়েছি। সে ভালো ছেলে ছিল। একমাত্র উপার্জনক্ষম শাহাদাতের প্রয়ানে পরিবারের বড় ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহায়তা করার সময় এ ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, শাহাদাত উল্যাহর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ডিপোতে থাকা মানুষজন বিস্ফোরেণের সময় আসহায় হয়ে পড়েছিলো। ঠিক ঐ বিপদের সময় তারা জানতা কি করবে। চোখের পলকেই ঝরে পড়তে লাগল একের পর এক তাজা প্রাণ। পরিবারের মানুষদের আহাজারির দৃশ্য আসলেই দেখা খুব কষ্টকর।