সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর সদরঘাট থেকে তাদের গ্রেপ্তারের পর নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক পালানোর চেষ্টা করছেন- গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য পেয়ে পুলিশের একটি দল রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় অভিযানে যায়। সেখান থেকে তাদের আটক করা হয়।
পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় দুদকের আইনজীবী হিসেবে আলোচনায় আসেন আনিসুল হক। তার নেতৃত্বে একটি দল ২০১৩ সালের মে মাসে কানাডায় যায় দুর্নীতির মামলার তদন্ত করতে। মূলত তার উত্থান দুদকের আইনজীবী হিসেবে।
এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা ও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সিরাজুল হকের ছেলে হওয়ার কারণে বা আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহ ও দুদকের মামলাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মামলা পরিচালনা করার কারণেও তিনি শেখ হাসিনা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনে দলের মনোনয়ন পান এবং পরে তাকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রীত্বের স্বাদ পান।
গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত দুইজন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রীকে একটি প্রজেক্ট পাস করা নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়। ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া ৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ফোনালাপে ইনফো সরকারের প্রকল্প পাসের কথা উঠে আসে। যেখানে সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথাও ছিল।
সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে স্বাধীনতাবিরোধী দলগুলোর ষড়যন্ত্রমূলক আন্দোলন বলে মন্তব্য করেন আনিসুল হক। ১২ জুলাই তিনি বলেন, রা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, কোটা আন্দোলন সেই অপশক্তির ষড়যন্ত্র।
তার পিতা মরহুম সিরাজুল হকও একজন রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ছিলেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আনিসুল হকের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার পানিয়ারুপ গ্রামে। তার বাবা সিরাজুল হক ও মা জাহানারা হক দুজনেই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আনিসুল হকের বিয়ের কয়েকদিন পর তার স্ত্রী নূর আমাতুল্লাহ রিনা হক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর আর বিয়ের পিড়িতে বসেননি তিনি। তার বাবা সিরাজুল হক ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর সিরাজুল হক ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর মারা যান।