সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সালমা খানকে নিয়ে দীর্ঘ লম্বা একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন অর্থনীতিবিদ ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্যাংকার ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যা ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে দেখা গেছে। স্ট্যটাসটিতে তিনি সালমা খানের সঙ্গে নিজের অনেক স্মৃতি তুলে ধরেছেন।
পাঠকদের উদ্দেশ্যেতার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
সালমার সাথে আমার পরিচয় ৭২ সাল থেকে এবং একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার শুরু। যেদিন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যোগদান করি। সালমাও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক। তার স্বামী রানু ভাই এবং তার ভাই জামিল চৌধুরীর সাথে আমার পরিচয় আরো আগে থেকেই। অর্থনীতি বিভাগকে প্রাণচঞ্চল করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছিলাম। সালমা সব কিছুতেই উৎসাহী। তার বাসায় নাস্তাপানির প্রণোদনা বরাবর আমাদের একত্র করতে নিশ্চিতভাবে সাহায্য করে গেছে।
আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে টাঙ্গাইলে চলে আসি ৭৮ সালে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাঙ্গাইল পর্বের পর যখন ঢাকায় আসলাম তখন সালমারাও ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এখন আমি শুধু সালমা নই, তার পুরো পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলাম।সালমা নাজমা আমার বিয়ে নিয়ে মেতে পড়লো।।
সালমা-রানু খানের বাসা হয়ে ওঠে আমাদের স্থায়ী বৈঠকখানা।
সালমা এরই মধ্যে নানাভাবে নিজেকে প্রসারিত করতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে নারী আন্দোলনে। সবাই তার প্রশংসা করে। সালমা স্পষ্টভাষী। কারো মন যুগিয়ে কথা বলার অভ্যাস তার কখনোই হয়নি। তার পক্ষে যুক্তিগুলো তৈরি থাকতো জোরালোভাবে। তাই পিছপা হননি তিনি। নারী আন্দোলন সবেমাত্র গতি পাচ্ছিল। আন্দোলনটি সালমার সতেজ বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে এই আন্দোলন বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে। সালমা তার কথায় এবং যুক্তিতে যেকোনো আলোচনা তার পক্ষে আনতে পারতেন। যে কোনো সভায় বাংলা বা ইংরেজি যেকোনো ভাষায় যুক্তিপূর্ণ বক্তৃতা দিতে সালমার জুড়ি ছিল না। আমাদের কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতো না সালমাকে সভাপতিত্ব করতে রাজি না করিয়ে।
তিনি নারীদের জন্য সত্যিকারের বিশ্ব সনদ তৈরি করতে সিডোর সাথে দিনরাত কাজ করেছেন। বিশ্ব পরিমণ্ডলে গিয়ে তিনি হারিয়ে তো যানইনি, বরং তিনি তার প্রতিভার উপযুক্ত সত্যিকার কর্মক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি এমন এমন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন যেগুলি আমি কীভাবে সমাধান করব তা জানতাম না। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। সমাধান তার চাইই।
পত্রপত্রিকায় লেখার ব্যাপারেও তিনি একপায়ে খাড়া। শুধু লেখার জন্য লেখা না। তার বক্তব্য তিনি তুলে ধরবেনই। তা জোরালোভাবেই তুলেছেন।
তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাজ খুব পছন্দ করতেন। আমরা তাকে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্য করেছিলাম। কোনো বোর্ড মিটিংয়ে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন না। পরিবর্তে, তিনি আগে থেকেই খুঁজে বের করতেন কখন মিটিং হবে যাতে তিনি নিজের প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারেন। অসুস্থতার কারণে সভায় উপস্থিত হতে না পারার জন্য তিনি বারবার আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু এতো কিছু সত্বেও বন্ধু পরিচর্যায় তিনি ক্ষান্তি দেননি। শুধু আমরা নিয়মিতরা তো বটেই, নতুন প্রজন্মের বন্ধুরাও এতে যোগ দিয়েছেন। বাসায় না গেলে সে আমাকে তার চমৎকার স্বাদের একটি কেক পাঠাত এবং আমাকে মনে করিয়ে দিত কেন আমি অনেক দিন গেলাম না।
সেই সালমা এখন তুমি একেবারেই আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলে।
এটা মেনে নেবো কীভাবে।
এদিকে সালমা খানকে নিয়ে ড. ইউনূসের আবেগঘন এই স্ট্যাটাসটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে নেটিজেনদের মাঝে। অনেকেই বাংলাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান এই অর্থনীতিবিদের সুস্থতা কামনা করে তার দীর্ঘায়ু প্রত্যাশা করেন।