রাজধানীর লোকার বাস গুলোতে প্রায় শোনা যায় সব বয়সী নারীদের সুযোগ পেলেই কু-নজরে দেখতে শুরু করে কিছু দুস্কতিকারীরা। এদের এসকল অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য অনেক নারীর জীবন ঝুকিপুর্ন হয়ে ওঠে। অনেকে আবার তাদের সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। সম্প্রতি আবারো এক ছাত্রীকে একা পেয়ে বাসের কর্মচারীরা ভুক্তভোগীর সাথে খারাপ কাজের চেষ্টা করেন। এমনই একটা অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী নিজেই।
রাজধানীতে চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন এক ছাত্রী। বিকাশ পরিবহনের ওই বাসে ধানমন্ডি থেকে আজিমপুরে ফেরার পথে ফাঁকা বাহনটিতে এ হয়রানি করে বাসটির হেলপার। চলন্ত যান থেকে লাফিয়ে কোনো রকমে পালিয়ে বাঁচেন ওই তরুণী। গত রোববার (২৪ জুলাই) রাত ৯টা। সুনসান রাতের আজিমপুর এলাকা। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে আজিমপুরগামী বিকাশ পরিবহনের বাসে ওঠেন এক ছাত্রী। বাসে উঠেই চোখবন্ধ করে ইয়ারফোনে গান শুনছিলেন তিনি। এরপরের ঘটনা ফে// সবুক পোস্টে তুলে ধরেন ভুক্তভোগী। নীলক্ষেত মোড়ে সব যাত্রী নেমে গেলে একা হয়ে পড়েন ওই ছাত্রী। চোখ বন্ধ থাকায় সেটি জানতেও পারেননি। একপর্যায়ে তিনি দেখেন তার পাশে বসে শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে বাসের হেলপার। চিৎকার করলে চালক গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়।
সিট থেকে উঠে নামার চেষ্টা করলে হেলপার তাকে বাধা দেয়। এরই একপর্যায়ে আজিমপুর গার্লস স্কুলের সামনে চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে পড়েন ওই ছাত্রী। পরদিন সোমবার (২৫ জুলাই) রাতে সময় সংবাদ সরেজমিনে আজিমপুরে দেখা যায় বিকাশ পরিবহনের বাসগুলো এ সময় অনেকটা ফাঁকাই থাকে। ঘটনা শোনার পর বিকাশ গাড়ির ওই অভিযুক্ত চালক ও হেলপারের বিচার দাবি করেন অন্য চালকরা। বিকাশ গাড়ির এক চালক সময় সংবাদকে বলেন, ওই স্টাফদের কঠিন শাস্তি দেয়া হোক, যেন মা-বোনদের এমন ক্ষতি না করে। এ কাজ যারাই করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত। আশুলিয়া টু আজিমপুর এবং আজিমপুর টু আশুলিয়া রুটে বিকাশের ৫০ থেকে ৬০টি বাস চলাচল করে। ওই পরিবহনের ম্যানেজার বলছেন, যদি ওই ছাত্রী হেলপারকে চিনতে পারেন তবে ব্যবস্থা নেবেন তারা। পরিবহনের ম্যানেজার বলেন, ওই ছাত্রী যদি আমাদের একটু সাহায্য করেন চালক এবং হেলপার দেখতে কেমন বা গাড়ির সিটটি কেমন ছিল তাহলে আমাদের জন্য তাদের চেনাটা সহজ হবে, আমাদের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহজ হবে। এমনকি অন্য বাসেও তারা আর কাজ করতে পারবে না এমন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে রাজি নন। তবে তার পরিচিতদের পাশাপাশি নগরবাসী বলছেন, এমন ঘটনার বিচার হওয়া জরুরি।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগী। অভিযোগ পেলে মাঠে নামার কথা জানিয়েছে লালবাগ থানা পুলিশ। প্রসঙ্গত গত ৩ জুন গণপরিবহনে ৬৩ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার বলে জানায় আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ। আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, জরিপ প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকার বাস, ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিং বাহনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গুলশান, আজিমপুর, মিরপুর, বনানী, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী নারী ও কিছুসংখ্যক গৃহবধূর ওপর জরিপটি পরিচালনা করা হয়। জরিপ শুরুর সময়ের ৬ মাস আগ পর্যন্ত হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন এমন নারীদের তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। অফলাইন ও অনলাইনে জরিপ করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। জরিপটি পরিচালনা করা হয় এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌ// ন হয়রানির পাশাপাশি ১৫ শতাংশ বুলিং, ১৫ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য, ১৫ শতাংশ লিঙ্গবৈষম্য এবং ৮ শতাংশ শারীরিক গঠন নিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন।
জল্লেখ্য, রাজধানীর অভ্যান্তরিন রুটে চলাচলকারী পরিবহন সংখ্যা অনেক। বিকাশ নামের একটি পরিবহনে বাসের ভিতরে যাত্রী হিসেবে থাকা এক ছাত্রীকে একা পেয়ে তার সাথে বাসের চালক ও হেলপার খারাপ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। এ সময়ে বাসের ভিতরে সম্পুর্ন ফাকা ছিলো। এমনটা ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে জানিছেন ভুক্তভোগী। তবে এমন ঘটনা বর্তমানে নতুন কিছু নয়। তাই এই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়ে সে লক্ষ্যে দৃষ্টা শাস্তির ব্যাবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাধারন জনগন।