সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে পারিবারিক আদালতে বিচার প্রত্যাশী জাপানি মা এরিকো নাকানোর পক্ষে আদালত রায় দিয়েছে, যেটা তার জন্য একটি বড় ধরনের সুসংবাদ ছিল। তবে তিনি তার পক্ষে রায় পেলেও আপাতত দুই মেয়েকে জাপানে নিতে পারছেন না। কারন এই বিষয়টি আদালত থেকে চূড়ান্ত করেনি। তবে এই বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন নাকানো এরিকো। এদিকে তিনি ফের মেয়েকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
জাপানি মা এরিকো নাকানোর বিরুদ্ধে তার বড় মেয়ে জেসমিন মালেকাকে সাথে নিয়ে দ্বিতীয়বার পালানোর চেষ্টা করার জন্য আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওঠার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশ জানায়, আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে মামালা চলমান থাকা অবস্থায় তিনি বড় মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কাগজপত্র দেখার পর তাদের ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, জাপানি মা তার বড় মেয়েকে নিয়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার বিমানবন্দরে আসেন। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশে তাকে ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এর আগেও জাপানি মা তার দুই মেয়েকে নিয়ে নিজ দেশে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আদালতের রায়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। তবে এবার তিনি কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। উল্লেখ্য, ২৩ ডিসেম্বর জাপানি মা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে দুই মেয়েকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে তবে মেজ মেয়ে লাইলা বাবাকে হারাবে- এমন ভয় পেয়ে বাবার আশ্রয় নেন। তাই এবার মেজ মেয়ে মায়ের সঙ্গে ছিল না।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মা এরিকো নাকানোর দুই সন্তানকে তাদের মা নাকানো এরিকোর হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন আদালত। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক তথা বাচ্চাদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কার কাছে নিশ্চিত হবে রায়ে সেটির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাদী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, দুই সন্তান তাদের বাবার সাথে ভাল থাকবে বলে বাদী যে দাবি করেছেন, সেটি প্রমাণ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, নাবালিকা দুই সন্তানের সর্বশেষ বসবাসের স্থান জাপান। তাদের মা জাপানি ডাক্তার। তাই মায়ের হেফাজতে শি”শুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নিরাপদ থাকবে বলে মনে করছে আদালত।
তবে বার বার এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর জন্য তার বিরুদ্ধে ঐ সন্তানদের পিতা কোনো ব্যবস্থা নিবে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। মামলার রায়ের পর ঐ পিতাও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে সন্তানদের পিতার আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা ফের আদালতে আপিল করবেন।