স্বপ্নের পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন নানা কটু কথা শুনতে হয়েছে আওয়ামী সভাপতি ও মাননীয় প্রধামনমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারকে। কিন্তু এরপরও আত্মবিশ্বাস হারাননি তিনি, প্রবল ইচ্ছা ও সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি। আর সেই ধারাবাহিকতায় অবশেষে স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মান করে সমালোচনার কড়া জবাব দিলেন শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে নেপথ্যের ক্রীড়ানক হিসেবে ড. ইউনূসকে দায়ী করে ক্রমাগত ঝাঁপি খুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে। আর এই উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতুতে ইউনূসের ভূমিকা তুলে ধরে আবারও ‘ইউনুসনামা’র দ্বার উন্মোচন করলেন শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সকালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড) পল্লী জনপদ রংপুরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউনূসের নেতিবাচক ভূমিকার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন তিনি গণভবন থেকে কার্যত দুই জেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে নেপথ্যে ভূমিকা রাখা ড. ইউনূসসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশেরই একজন, যে আমার কাছ থেকে সব থেকে বেশি সুযোগ পেয়েছে। সব থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সে-ই বেঈমানি করেছে। তার বেঈমানির কারণে এই পদ্মা সেতুর টাকাটা বন্ধ হয়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রায় ৫২/৫৩টি ব্যাংক আছে। প্রতিটি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আছে। তাদের মধ্যে কতজন বিদেশে অর্থ উপার্জন করতে পারে? বা মিলিয়ন ডলার অনুদান দিতে? বা বিদেশ ভ্রমণে? কে পারে? দুর্ভাগ্যবশত, সবচেয়ে বেশি আমি তাকে একটি সুযোগ দিয়েছি।যেমন, আমি আমার মেয়াদে গ্রামীণফোনের এই ব্যবসা তাকে দিয়েছিলাম। তাকে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।’
১৯৯৮ সালে দেশের ভয়াবহ বন্যার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সে সময় আমাদের রিজার্ভ খুবই কম ছিল। অর্থনৈতিক অবস্থা সবদিক থেকেই খারাপ। এশিয়াজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় জর্জরিত। সে সময় গ্রামীণ ব্যাংক বসেছিল। সেক্ষেত্রে, ব্যাংকটিকে সচল রাখার জন্য, আমরা প্রথমে মোট টাকা দিয়ে ব্যাংকটিকে সচল রাখার সুযোগ দিই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গ্রামীণফোনের ব্যবসা দেই কারণ ওই ফোনের লভ্যাংশ গ্রামীণ ব্যাংকে যাবে। কিন্তু এক পয়সাও যায়নি। শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করিনি। আর কি? আমার দেশের নোবেল বিজয়ী। ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে পদত্যাগ করবেন না। যদিও আইনে চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর। কিন্তু তারপর ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে। তিনি দশ বছর ধরে অবৈধভাবে এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। আরও থাকার ইচ্ছে ছিল। তাকে আমাদের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, আপনি উপদেষ্টা থাকেন। আপনাকে সেই সম্মান দিয়ে রাখা হবে। সেটাও তিনি মানেন নাই। সরকারে বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। আর মামলায় হেরেও গিয়েছিলেন। কারণ, কোর্ট আর যাই পারুক বয়স তো আর দশ বছর কমাতে পারে নাই। যদি কমাতে পারত হয়তো কমিয়ে দিত।’’
শেখ হাসিনা বলেন, “হিলারি ক্লিনটন তাঁর বন্ধু ছিলেন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে মোটা অঙ্কের অর্থও দান করেছিলেন। আমি জানি না তিনি এত টাকা কোথা থেকে পেয়েছেন। তাও দেওয়া হয়েছিল। কাজেই সেই আমেরিকান সরকারদেরকে ধরে এই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করেন দেয়। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেয় কানাডা কোর্টে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম, ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে। আমি এমনিতে মেনে নেব না। প্রমাণ দিতে হবে, প্রমাণ দিতে পারে নাই। তখন আমি বলেছিলাম, টাকা লাগবে না। আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব।’
এদিকে এই মুহুর্তে পদ্মাসেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় যেন গোটা দেশের মানুষ। বিশেষ করে, পদ্মাসেতু ফলে দীর্ঘ ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলবে বলে প্রত্যাশা করছেন সবাই। আর তাই যেন তর সইছে না কারোরই।