সম্প্রতি গত কয়েক মাস আগেই বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির সঙ্গে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমতো দেশের প্রায় প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে আসেন সংসদ সদস্য ও সাবেক সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। আর এর ফলে শেষমেষ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ‘প্রতিমন্ত্রী’র পদ থেকে সরে যেতে হয় তাকে।
তবে এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও আলোচনায় এলেন ডা. মুরাদ হাসান।
জানা গেছে, প্রায় এক ঘণ্টা প্রখর রোদে শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রীমুরাদ হাসানকে অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শোক দিবসে গত সোমবার বিকেলে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বায়রা ইসরাইল আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের রাস্তায় বা মাঠে দাঁড়িয়ে কাউকে শুভেচ্ছা জানানো নিষিদ্ধ।
বিভিন্ন অভিযোগের কারণে পদ হারানো জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসানকে অভ্যর্থনা জানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব পরিদর্শন ও জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান। সোমবার বিকেলে ডিজিটাল ল্যাব পরিদর্শন, আলোচনা সভা ও কাঙালিভোজের আয়োজন করা হলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরেই হাজির করানো হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শিক্ষার্থীরা প্রখর রোদে দীর্ঘক্ষণ মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মাঠে আসেন মুরাদ হাসান।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, মুরাদ হাসান তার প্রাইভেটকার থেকে স্কুলের গেটে নেমে পড়েন। এ সময় বিভিন্ন স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান তার সমর্থকরা। ইতিমধ্যে স্কুল ভবন থেকে গেট পর্যন্ত সারিবদ্ধ শিক্ষার্থীরা হাততালি দিতে থাকে। দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্য দিয়ে হেঁটে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান প্রধান অতিথি।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির নাজমুল ইসলাম বাঁধনসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানকে স্বাগত জানাতে সব শিক্ষার্থী মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল। স্কুলের শিক্ষকরা তাদের হাজিরা দিতে নির্দেশ দেন, মানা ছাড়া উপায় ছিল না।
এ বিষয়ে পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মানিক বলেন, শুনেছি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ বাচ্চু ও সদস্য বাবু শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেন। এটি অনিয়মিত এবং দুঃখজনক।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ মাহমুদ জানান, শোক দিবস উপলক্ষে মতিউর রহমান তালুকদার স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে দুস্থদের জন্য খাদ্য বিতরণের আয়োজন করা হয়। বিকেলে অনুষ্ঠানে আসেন সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান। এদিকে দুপুর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত থাকে।
শিক্ষার্থীরা ফুল ছুড়ে এমপিকে বরণ করেনি, মাঠে লাইনে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইল আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুরুজ্জামান দাবি করেন, এটা কোনো অপরাধ নয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের রাস্তায় বা মাঠে দাঁড়িয়ে কাউকে শুভেচ্ছা জানানো আইনত নিষিদ্ধ। প্রধান অতিথিকে স্বাগত জানানোর সঙ্গে শোক দিবসের তাৎপর্যের কোনো সম্পর্ক নেই।
তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন ড. মুরাদ হাসান। শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে রাখায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তবে এ অভিযোগ রীতিমতো অস্বীকার করেছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ বাচ্চু। তার দাবি, শিক্ষার্থীদের মাঠে যেতে বলা হয়নি, প্রধান অতিথি আসার খবরে তারা নিজেরাই দাড়িয়েছে।