পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকদের খাদ্য তালিকার মধ্যে ফিশ ফ্রাই অন্যতম। কিন্তু সেই ফিশ ফ্রাই কতটুকু মানসম্মত কেউ জানে না। পর্যটকদের অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পচা মাছ খাওয়ানো হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করা হচ্ছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে রাস্তার ধারে রয়েছে অসংখ্য ফিশ ফ্রাইয়ের দোকান। সেই সাথে বালুকাময় সমুদ্র সৈকতেও রয়েছে অসংখ্য ফিশ ফ্রাইয়ের দোকান। সন্ধ্যা হলেই সামুদ্রিক মাছ নিয়ে বসেন দোকানিরা।
দোকানিরা ভ্যানে সারি সারি টুনা, স্যামন, রূপচাঁদা, কোরাল, রেড স্নাইপার, সুরমা, স্কাড, কাঁকড়া, চিংড়ি, অক্টোপাস ও অন্যান্য প্রজাপতি সামুদ্রিক মাছ সাজিয়ে রেখেছেন। এসব সামুদ্রিক মাছের সমাহার দেখে পর্যটকরা রাস্তার পাশে বসেন। কেউ পছন্দের মাছ কিনে বারবিকিউ করে খায় আবার কেউ কেউ ভাজি করে খায়। কিন্তু কেউ জানে না এই মাছ কতটা স্বাস্থ্যকর বা ব্যবহৃত তেলের গুণাগুণ?
পর্যটকরা বলছেন, সমুদ্র সৈকত এলাকায় সামুদ্রিক ফিস ফ্রাই খুবই জনপ্রিয় খাবার। কিন্তু তা নিয়ে নয়-ছয় করা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা মরিয়ম নূপুর জানান, কক্সবাজারের সবচেয়ে বেশি পছন্দ সামুদ্রিক মাছ। বারবিকিউতে কোরাল, রূপচাঁদা, সুরমা খেতে খুব ভালো লাগে। তাই সন্ধ্যায়, আমি আমার পরিবারের সাথে একটি সীফুড বারবিকিউ খেতে এসেছি। আমি ১২০০ টাকায় 3 কেজি ওজনের একটি সুরমা মাছ কিনে বারবিকিউ করে খাচ্ছি।
সোয়েব আহমেদ নামে আরেক পর্যটক জানান, কক্সবাজার এসে যে পচা-বাসি কিনে খাব সেটা আগে ভাবি নাই। দোকানিরা আমাদের যে পচা মাছ খাওয়ায় তা আগে জানতাম না। মাছগুলো দেখে মনে হয় একদম তাজা কিন্তু তার আড়ালে পচা-বাসি মাছ খাওয়ানো হচ্ছে এটা কোনোভাবেই উচিত নয়।
এছাড়াও বেশির ভাগ সময় পাশের পচা নর্দমার পানি ব্যবহার করা হচ্ছে মাছ ধোয়ার জন্য যেটা অনেক ক্রেতা পর্যটকেরা জানেন না।
পচা মাছ খাওয়ানো ও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে অভিযান চালায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। অভিযান টের পেয়ে অনেক দোকানদার পালিয়ে যায়। পচা ও বাসি মাছ জব্দ করার পাশাপাশি জরিমানা করা হয়। আর সব ফিশ ফ্রাইয়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষায় দেখা যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি হচ্ছে। পর্যটকদেরও খাওয়ানো হচ্ছে পচা ও বাসি মাছ। এসব দোকানে সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল।
তিনি আরও বলেন, প্রায় সব দোকানেই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় মাছ বিক্রি হয়। এছাড়া সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো অনেকদিনের থাকা তেলে মাছ ভাজা হচ্ছে। দাঁড়ানোর অবস্থাও নেই। খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুদ রানা বলেন, অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের দায়ে ৪টি ভ্রাম্যমাণ দোকানকে ২৩ হাজার টাকা জরিমানা ও সিলগালা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সব ফিস ফ্রাইয়ের দোকান আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা যখন মান ঠিক করে আমাদের কাছে প্রমাণ করতে পারবে তখন তারা আবার দোকান খোলার সুযোগ পাবে।