Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / National / ফিরিয়ে আনা হলো বিদেশের মাটিতে দেশের নাম ডোবানো সেই কূটনীতিকে, ক্ষোভ ঝাড়লেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ফিরিয়ে আনা হলো বিদেশের মাটিতে দেশের নাম ডোবানো সেই কূটনীতিকে, ক্ষোভ ঝাড়লেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ থেকে অনেক কুটনীতিককে বিদেশে পাঠানো হয় নিয়মানুযায়ী। তবে সম্প্রতি এমনই এক নারী কুনীতিক বিদেশে মাটিতে দেশের নাম ডুবিয়েছেন নিজের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে। জানা যায় জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উপপ্রধান কাজী আনারকলির বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ মাদক মারিজুয়ানা রাখার অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এ দিকে নারী কূটনীতিকের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ কে আব্দুল মোমেন। অভিযোগ স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, মাদকাসক্তি বাংলাদেশকে ‘বদনাম’ দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আনারকলির এ ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ। মারিজুয়ানা বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ মাদক। তিনি জাকার্তায় একজন নাইজেরিয়ান নাগরিকের সাথে থাকতেন বলে জানা গেছে। ইন্দোনেশিয়ার আইন প্রয়োগকারী বাহিনী নাইজেরিয়ান নাগরিকসহ আনারকলিকে গাঁজাসহ কয়েক ঘণ্টা ধরে আটক করে। এরপর বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আনারকলিকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে ইন্দোনেশিয়ার অনুরোধের পর সরকারি মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

জানতে চাইলে নিউইয়র্ক সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন মঙ্গলবার ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের রাষ্ট্রদূত পুরো ঘটনা খুলে বলেন। সে (আনারকলি) একজন মাদকাসক্ত। আমি তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে বলেছি। রাষ্ট্রদূত তাকে ফেরত পাঠান। তার অপকর্মের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’

একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সে একজন মাদকাসক্ত। তাকে রিহ্যাবে পাঠানো দরকার। দেশের মানহানি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ানরা খুব ভদ্রলোক। বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ হাতেনাতে ধরা পড়লেও তা প্রকাশ করা হয়নি। এখন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষা। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকার সময়ও তিনি অপকর্ম করেছিলেন। ওকে সেখান থেকে বের করে দাও। সে মাদকাসক্ত, অসুস্থ। তার চিকিৎসা দরকার। তার বিরুদ্ধে সরকারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বাড়িতে ‘মাদক পাওয়ার ঘটনা’ প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান কাজী আনারকলিকে ঢাকায় ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

মঙ্গলবার তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। আমরা খবর দেখেছি, খবর শুধু দেখার বিষয় নয়, কয়েকদিন ধরে ওই কর্মকর্তার কথা জেনেছি। আমরা তদন্ত করছি। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।’

আনারকলিকে ইন্দোনেশিয়ায় ‘প্রচুর পরিমাণ গাঁজা রাখার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পর, মঙ্গলবার জাকার্তা থেকে তার প্রত্যাবাসনের প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এতে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়া সরকারের মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ জাকার্তায় আনারকলির অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায়। এরপর তাকে আটক করা হয় কিন্তু ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে কূটনৈতিক অনাক্রম্যতার ভিত্তিতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পরে ইন্দোনেশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে এই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কখনোই পররাষ্ট্র ক্যাডারের উচ্চমানের সঙ্গে আপস করব না। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এতটুকুই বলতে পারি।’

কূটনৈতিক দায়মুক্তি থাকা সত্ত্বেও আনারকলির বাড়িতে অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হলো, এখানে কোনো ভুল নেই। এবং আমরা শুনেছি যে ওই বাড়িতে আরও একজন বিদেশী নাগরিক ছিল। সেক্ষেত্রে পুলিশ যেতে পারে।

তবে আমরা ইন্দোনেশিয়ার সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমাদের সমর্থন করেছে। আর আমাদের কূটনীতিকরা আমাদের হেফাজতে, আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এটা আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে. তবে আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হবে। এবং এটি সঠিক পথে যাবে।

মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, গাঁজা উদ্ধারের অভিযোগে আনারকলির অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আরেক নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের একজন কর্মকর্তা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এটাকে গল্প বলুন বা ঘটনা বা ঘটনা বলুন, তিনি এর সঙ্গে জড়িত। সে নিজে করেছে, নাকি তার বন্ধু করেছে- সেটা পরে তদন্তে উঠে আসবে। কিন্তু পুরো বিষয়টিই দুর্ভাগ্যজনক এবং বিব্রতকর।
আনারকলিকে কূটনৈতিক দায়িত্ব থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে গৃহকর্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, নারী কুটনীতিক আনারকলি সম্পর্কে জানা যায় অনেক কিছু। তিনি ২০ তম বিসিএস এর একজন ক্যাডার।এরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রনলায় থেকে তাকে কুটনীতিক করে পাঠানো হয় জাকার্তায়।

About Rasel Khalifa

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *