গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে আগুন নিয়ন্ত্রন ও উদ্ধার কাজ চালাতে প্রাণপন চেষ্টা চালান ফায়ার সার্ভিসের অংখ্য কর্মীরা। তবে ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, আগুনে আটকা পড়া মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে। আর তাদের মধ্যে একজন মিঠু দেওয়ান।
মিঠু দেওয়ান, সিনিয়র নেতা, কুমিরা ফায়ার স্টেশন, সীতাকুণ্ড। বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের রাতে তিনি রাঙামাটিতে গ্রামের বাড়ি থেকে ফেরেন। জুম আমাদের সবার জন্য বাসা থেকে আনারস নিয়ে এসেছে। আমাকে বললেন, ট্রেনিংয়ে চট্টগ্রাম যাওয়া ভালো, দুটো আনারস সঙ্গে নিয়ে যাও। খেতে অনেক মজা পাবেন। চট্টগ্রামে এসব পাবেন না। কে জানত এটাই হবে তার সাথে আমার শেষ দেখা। ‘
কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের আরেক নেতা আতিকুর রহমান বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সহকর্মীদের স্মরণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি হয়তো আমার জীবনে ভালো কিছু করেছি, যার জন্য আমি এখনো বেঁচে আছি। যে রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, আমাকে ভূমিধসের প্রশিক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম যেতে হয়েছিল। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনার খবর পাই। জরুরি কারণে প্রশিক্ষণ বাতিল করতে হয়েছে। আমি বর্তমানে আমাদের স্টেশনে আছি।
আতিকুর রহমান বলেন, এটা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। যারা সারাদিন অফিসে ঘুরতেন তাদের অনেকেই আর নেই। কুমিরা ফায়ার স্টেশনের ১৫ জন শ্রমিক আগুন নেভাতে সেখানে যান। তাদের মধ্যে ৭ জন নিহত এবং একজন নিখোঁজ রয়েছে। আহত ৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
‘আমাদের এই কঠিন পরিস্থিতিতে মাত্র তিন-চারজন কর্মচারী দিয়ে অফিস চালাতে হচ্ছে। কাজের ফাঁকে বারবার ভেসে উঠছিল প্রিয় সহকর্মীদের মুখ। ফায়ার সার্ভিসে কাজ করলে কি হবে, আমরাও মানুষ। আমরাও কষ্ট পাই। কিন্তু সবাই সেটা বুঝতে পারে না। নিজেকে ঠিক রাখা খুব কঠিন। ‘
এদিকে এ দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মৃত্যুর খবরে গভীর শোক প্রকাশ করে পরিবার-স্বজনদের সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা।