Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ফারদিন আত্মহনন করেছে, দাবি করে কারণ জানালেন ডিবি প্রধান

ফারদিন আত্মহনন করেছে, দাবি করে কারণ জানালেন ডিবি প্রধান

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃ”ত্যুর বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে শুরু হয় আলোচনা। তার মৃত্যুর রহস্য উৎঘাটন করতে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশসহ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক শাখার সদস্যরা। কিন্তু ফারদিনের মৃ”ত্যুর রহস্য পরিষ্কারভাবে জানতে পারিনি গোয়েন্দারা, যার কারণে তার মৃ”/ত্যুর রহস্য অনেকটাই অস্পষ্ট থেকে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা প্রধান মোঃ হারুন-অর-রশিদ তার মৃ”ত্যু নিয়ে ভিন্ন ধরনের কথা বললেন যা এতদিনের ধারনা বা অনুমানকে পুরোপুরি বদলে দিলো।

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, হতাশা ও টাকাপয়সার জন্য বুয়েটের ছাত্র ফারদিন নূর পরশ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহনন করেছিলেন। গতকাল বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মুখী ছিলেন। সবার সাথে সবকিছু শেয়ার করতে পারতেন না। তার ফলাফল ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ আসে ৩.১৫, তারপর ধীরে ধীরে ২.৬৭, যা পরিবার বা আত্মীয়-স্বজন কেউ জানত না। একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে স্পেনে যাওয়ার জন্য তার ৬০,০০০ টাকা প্রয়োজন হয়, যা তিনি সংগ্রহ করতে সংগ্রাম করছিলেন। বন্ধুরা তাকে ৪০ হাজার টাকা দেয়। পরে একধরনের মানসিক চাপে আত্মহনন করেন।

তিনি বলেন, ফারদিন চারটি টিউশনি করতেন। নিজের ও ছোট দুই ভাইয়ের লেখাপড়ার সব খরচ তিনি চালাতেন। তিনি নিজের জন্য কিছুই করেননি। তারপরও বাড়ি ফেরার চাপ ছিল পরিবার থেকে। হলে থাকতে দিতে চাইতো না তার পরিবার। এ নিয়ে এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিলেন, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি।

ঘটনার দিন ফারদিন নূর পরশের গতিবিধির বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, তার দুটি নাম্বারে ‘বি-পার্টি’ ছিল সর্বমোট ৫২২টি। সেই রাতে তিনি যেখানে যেখানে ঘুরেছেন, আমরা তার সেলফোনে একই অবস্থানে বি-পার্টি আমরা সার্চ করে পাইনি। তিনি যেভাবে উন্মাদের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন তাতে প্রতীয়মান হয়, মানসিকভাবে ফারদিন ডিস্টার্ব ছিলেন। সে রাতে কারো সাথে দেখা হয়নি তার। তিনি বাবুবাজার সেতুকে টার্গেট করেন। ১০:৫৩ PM থেকে ১১:০৯ PM পর্যন্ত তিনি বাবুবাজার ব্রিজ এই সময়ে খুব ব্যস্ত থাকায় সম্ভবত তিনি সেখান থেকে পিছু হটেন। নিজের সাথে নিজে কথা বলে সময় নেয়। তারপর আবার তিনি নিজের বাসা পেরিয়ে ডেমরা ব্রীজে যান। তার গ্রামীণ নম্বর আইপিডিআর-এর শেষ সেতুতে তার অবস্থান অনুমান করা হয়েছে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ফারদিন চানপাড়া বস্তিতে যাননি। কেউ তাকে তুলে নিয়ে গেছে- এমন তথ্য আমরা পাইনি। তার গ্রামীণ নম্বর নাম্বারের ৪-জি সেল ১৩.৩২.৩৩ তার লোকেশন, তার অবস্থানের সাথে মিলে যায়, যেখানে লেগুনা চালক বলেছিল যে সে নেমে যায়। বিশেষ করে সেল ৩২ ঠিক সেতুতে দেখায়। নদীর ওপারে গেলে ৩২টি সেল পাওয়া যায় না। এর মানে সর্বশেষ সেতুর ঠিক মাঝখানে তার অবস্থান ছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মহননের আগে সারা রাত ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে একা একা ঘুরে বেড়ানোর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ফারদিন একা একা ঘুরে বেড়াতেন। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পর তিনি উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ান এবং কারও সঙ্গে দেখাও করেননি। তার গত ১ বছরের সিডিআরের পর্যালোচনা করলে এটি আগে কখনও দেখা যায়নি।

ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর মেসেঞ্জার ও টেলিগ্রামে অনেক কথোপকথন রয়েছে, যেখানে ফারদিন তার হতাশা অনেকবার প্রকাশ করেছেন। মুমু জানায়, ফারদিন বিষণ্ণ ছিল। মুমু ভাবছে তিনি আত্মহনন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ফারদিন সাঁতার জানতেন না।

ফারদিনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, ময়নাতদন্তের আগে গণমাধ্যমে এ ধরনের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরা অনেকবার যোগাযোগ করেছি। ভিসেরা রিপোর্ট এখনো আসেনি। আসলে পূর্ণাঙ্গ মতামত তারা দেবেন। প্রাথমিক প্রতিবেদনে মাথায় আঘা”তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু খুব সামান্য আঘা’ত, যা মৌখিকভাবে ঠিক বা নিশ্চিতভাবে(মৃত্যু) বলা যায় না। এই আঘাতের কারণে সর্বোচ্চ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যদিও তিনি গণমাধ্যমের সামনে বলে ফেলেছেন তার মাথায় অসংখ্য আঘা’তের চিহ্ন রয়েছে। অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকলে তা পুলিশ রিপোর্টে থাকত। সুরাথাল রিপোর্টে কোন আঘা”তের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার জামাকাপড়েও কোনো ছেঁড়া চিহ্ন ছিল না।

ফারদিনের প্রয়ানের কয়েক সপ্তাহ পার হলেও তার মৃ”ত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি গোয়েন্দা সদস্যরা। যার কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছিল গোয়েন্দারা। এদিকে ফারদিনের আত্মহননের বিষয়টি সম্পর্কে বলা হলেও সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। তবে ডিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ফারদিন কে কেউ হ”/ত্যা করেনি, তিনি হতাশা থেকেই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

 

About bisso Jit

Check Also

ভারতের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ফাঁস, বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা

ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *