বাংলাদেশের সব থেকে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো বুয়েট। আর এই বুয়েটই এখন সব থেকে বড় আলোচনা সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সারা দেশে। গেলো কয়েকদিন আগে বুয়েটের এক মেধাবী ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হয়েছে নিহত। আর এই ঘটনা এখন চর্চায় রয়েছে সবখানে। এবার এ নিয়ে একটি লেখনী লিখেছেন জুলকারনাইন সায়ের। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো হুবহু:-
ভোরের কাগজ ইশারা করছে ফারদিন নূর জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে ঘর ছেড়েছিলেন অথবা হিযরত করতে গেছেন।আবার সমকাল বলছে ফারদিন এক বান্ধবীকে নামিয়ে দিয়ে রাতের বেলা ম্যাসেঞ্জারে আরেক বান্ধবীর সাথে কথা বলেন ও অতঃপর মাদক কিনতে পূর্বপরিচিত সাপ্লাইয়ারের কাছে যান (তাকে মাদকাসক্ত বলে আখ্যায়িত করার একটা প্রয়াস) ও সেখানে ফেনসিডিল নিয়ে দরদামের কারনে (বুঝিয়ে দেয়া যে ছেলেটি ফেনসিডিল সেবন করতো) সংঘটিত মারামারি থেকে তাকে পিটিয়ে মারা হয়।
আইন-শৃংখলাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ীই যদি বলি, তাহলে এটা একটু বুঝিয়ে বলুন; যে ছেলে কথা বলতে বলতে রামপুরা থেকে রাত ১.৩০টায় মাদক কিনতে কেরানীগঞ্জ পৌঁছে এবং সেখানে না পেয়ে রাত ২.৩০’তে ডেমরা পর্যন্ত চলে যেতে পারে সে কি মধ্যরাতে ফাইনালি মাদক খুঁজে পাওয়ার পরে দরদাম নিয়ে বাহাসে জড়াবে?
সবাই বেশ স্মার্টলি যে বিষয়টি পাশ কাটিয়ে গিয়েছে তা হলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক রাজনীতির পুনরুত্থান ঠেকাতে ফারদিন নূর বেশ সোচ্চার ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জবরদখল করা বেশ কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সাংগঠনিক কমিটি গঠন করেছে এবং একই সময়ে আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিষেধাজ্ঞা থাকা বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি সক্রিয় করতে তাদের কিছু নেতা বুয়েট ক্যাম্পাসে হাজির হয়ে কিছু তৎপরতাও চালান। কিন্তু ফারদিনের মত সাধারন শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে সুবিধা করে উঠতে পারেন নি।
১৩ই অগাস্ট ২০২২ সংযুক্ত ফেসবুক পোস্টে ফারদিন বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করে তার বন্ধুদেরও বিষয়টিতে সজাগ থাকতে বলে।
ফারদিনের নিথর দেহে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে তা লাঠির বা লোহার রডের হতে পারে বলে আমি জানতে পেরেছি। আবরার ফাহাদের শরীরেও এ ধরনের দাগ ছিলো আবার কিছুদিন আগে নাটোরের সিংড়ায় আশরাফুল ইসলাম নামের এক ছাত্রলীগ নেতা তার মামাকে রড দিয়ে পিটিয়ে এভাবেই ‘হ’ত্যা’ করে। লাঠি-রড দিয়ে পিটিয়ে মারা ছাত্রলীগের একটা পরিচিত প্যাটার্ন।
মূল্যে বনিবনা না হওয়ায় কিছু মাদক ব্যবসায়ী মধ্যরাতে একটি ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে নৌকা ভাড়া করে তার লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিবে এই গল্পটা প্রচন্ড মেকি লাগে। আবার ওই মাদক ব্যবসায়ী চক্রের অন্যতম হোতা শাহীনকে গতকাল ক্রসফায়ারে RAB হ’ত্যা’-করে বিষয়টিকে একেবারে গুবলেট করে ফেলেছে। কারন বাংলাদেশে বিশেষ করে বৃহত্তর ঢাকা এলাকায় যেভাবে গোয়েন্দা জাল ছড়ানো আছে, তাতে ৪ নভেম্বর রাতে একটি ছেলেকে ডেমরায় ‘মা’দ’ক’ ব্যবসায়ীরা পিটিয়ে মেরে ফেললে সে তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছতে ২-৩ ঘন্টার বেশী লাগার কথা না। কারন শুধু গোয়েন্দারাই না তাদের সোর্স নেটওয়ার্ক ঢাকার এই এলাকায় (ডেমরা-কেরানীগঞ্জ) খুবই একটিভ। এধরনের কিছু ঘটে থাকলে ১০-১২ ঘন্টার মধ্যেই এদের গ্রেফতার হওয়ার কথা! আর ২৩ মামলার আসামী শাহীন ওরফে সিটি শাহীন ডেমরায় ঘাপটি মেরে বসেছিলো এটা কেউ এতদিন জানতেন না?
হত্যার পরে শীতলক্ষ্যায় লাশ ফেলে দেয়া আবার ওই RAB এরই একটা সিগনেচার। আর ‘হ’ত্যা’র’ শিকার এক মেধাবী ছা’ত্র’কে’ মাল্টিপল প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক, জঙ্গি-মাদকাসক্তের তকমা দিয়ে প্রেসের সহায়তায় তার চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধের প্রয়াসও এদেশের গোয়েন্দারা হরহামেশাই করে থাকেন। আর দেশের প্রধানমন্ত্রীও নদীতে মানুষজন ফেলে দিতে বা চুবাতে বেশ উৎসাহী।
প্রশ্ন হলো কে বা কারা আসলে ফারদিন’কে হ’ত্যা’ করেছে? আর কারা ফারদিনের এই হ’ত্যা’কে’ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে?
প্রসঙ্গত, এ দিকে ফারদিনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে তার বান্ধবীকে। এ ছাড়াও আরো একজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ।