বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশকে হ”/ত্যাকান=ডের সাথে কারা জড়িত সে বিষয়ে মোটামুটি সঠিকতার কথা জানালেন র্যাব। তবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে এখনো গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধোয়াশা কাটাতে পারছে না। আর সে বিষয়টি হলো ফারদিনের অবস্থান। তদন্তকারী পুলিশেরা এটা বুঝতে পারছেন না যে, ফারদিন কীভাবে খু”/নিদের খপ্পরে পড়েছেন এবং কেন ঠিক কোন কারণে তাকে নিথর করা হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এখন ফারদিনের অবস্থান এবং শেষ সাড়ে চার ঘণ্টায় কী ঘটেছিল সেটা নিয়ে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে। মুঠোফোনের সূত্র ধরে, এ সময় ঢাকা ও ঢাকার উপকণ্ঠে ছয়টি এলাকায় তার অবস্থানের আলামত পাওয়া গেছে।
ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা রামপুরা থানায় প্রথম জিডি করেন। এরপর পুলিশ তার মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করে। তার নিথর দেহ উদ্ধারের পর তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ফারদিনের গতিবিধি শনাক্ত করেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ঘটনার দিন (৩ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে ফারদিন এক বন্ধুকে রামপুরায় পৌঁছে দেন। এরপর রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি রামপুরা এলাকার মোবাইল ফোন টাওয়ার নেটওয়ার্কে ছিলেন। এরপর রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে কেরানীগঞ্জ টাওয়ারে, রাত ১০টা ৫৩ মিনিটে বাবু বাজারে, রাত ১১টা ০৯ মিনিটে জনসন রোডে এবং দুপুর ২টা ০১ মিনিটে যাত্রাবাড়ী বিবিরবাগিচার টাওয়ারে নেটওয়ার্কে তার অবস্থান দেখা যায়। দুপুর ২টা ৩৪ মিনিটে চনপাড়ায় তার মোবাইল ফোনের অবস্থান পাওয়া যায়। এর পর ফোনটি আর সচল ছিলেন না।
পারিবারিক তথ্য অনুযায়ী, ফারদিনের পরীক্ষা ছিল ৪ নভেম্বর। এ কারণে ৩ নভেম্বর দুপুরের পর ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়। বাসায় বলে যান যে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বুয়েটে যাচ্ছেন, রাতে হলে থাকবেন। কিন্তু পরীক্ষার আগের রাতে কেন বুয়েটে না গিয়ে এভাবে হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে পড়লেন, এই প্রশ্নের এখনও সমাধান হয়নি।
ফারদিনের ঘটনার মামলার ছায়া তদন্ত করছে র্যাব। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, গত সাড়ে ৪ ঘণ্টার শেষ ৩৩ মিনিটে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ফারদিন চানপাড়াকেন্দ্রিক অপরাধী চক্রের জিম্মায় ছিলেন বলে তারা নিশ্চিত করেছেন। ৩৩ মিনিটের মধ্যে তাকে নিথর করে দেয় অপরাধীরা। ১০ থেকে ১১ জন জড়িত রয়েছে এমন তথ্য পাওয়ার কথা বলছেন র্যাব কর্মকর্তারা। ৩ নভেম্বর রাত ২টা ১০ মিনিট থেকে ২টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত ফারদিনের মোবাইল ফোনের অবস্থান দুই সন্দেহভাজনের কাছাকাছি ছিল। শনাক্ত দুজনের মধ্যে একজন বাসের চালক ও অন্যজন তার সহকারী। তদন্তকারীদের ধারণা, তারা ফারদিনকে চানপাড়ায় নিয়ে যায়। যাইহোক, তদন্তকারীরা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি যে ফারদিন কোনভাবে ফাঁদে পড়েছিল, নাকি জোর করে নিয়ে গিয়েছিল।
র্যাব সূত্র জানায়, এই দুই পরিবহন শ্রমিক দিনের বেলায় ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ সড়কে বাস চালাতো। তারা গভীর রাতে খালি বাসে যাত্রী তুলে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিত। কখনো কখনো যাত্রীদের জিম্মি করে চানপাড়ায় নিয়ে যায়। চনপাড়ার আরও ১৪-১৫ জন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা নিষিদ্ধ দ্রব্য, মানুষকে ফাঁদে ফেলে ছি”নতাইসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রযুক্তিগত তদন্ত ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ফারদিনকে নিথর করার ঘটনাটি চনপাড়া বা তার কাছাকাছি কোথাও ঘটেছে। চনপাড়ার একটি অপরা”ধী চ’ক্রের প্রধান রায়হান ও তার সহযোগীরা এ ঘটনায় জড়িত। জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হলে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উৎঘাটন কারণ জানা যাবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ফারদিনের নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার বাবা কাজী নূর উদ্দিনের রামপুরা থানায় দায়ের করা মামলায় আয়াতুল্লাহ বুশরা নামে এক বন্ধুকে আটক করা হয়েছে। মাম’লাটি তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিবি)। তদন্তকারীরা বলছেন, ফারদিন ৩ নভেম্বর বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আয়াতুল্লাহ বুশরার সঙ্গে ছিলেন। তিনি কেন রাত ১০টার পর বুয়েটের হলে না গিয়ে অন্য কোথাও গেলেন তা পরিবার বা সহপাঠীরা কেউই অনুমান করতে পারছেন না। তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন বুঝতে পারছেন না যে ফারদিনের চনপাড়ায় যাওয়ার আলামত কীভাবে আসলো।
এদিকে তদন্তকারীরা বেশ জোরে শোরে তদন্তে নেমেছে এবং সবকিছু খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। তারা আলামত খুজতে আরো নানা ধরনের কৌশল ব্যবহার করছে। গ্রেফতার হওয়া বান্ধবী বুশরাকে তার অবস্থানের সাথে মিলিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাছাড়া তার নিথর হওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।