মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ার কারণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফারদিন নূরের মৃ”ত্যু ঘটেছে এমনটাই উঠে এসেছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে। তাদের প্রতিবেদনে উল=লেখ করা হয়েছে ফারদিনের মাথায় ভারী ওজনের কোন বস্তুর আঘাত লাগার ফলে তার প্রয়ান ঘটেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্রের প্রয়ান নিয়ে নানা ধরনের রহস্য সৃষ্টি হলেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। যে সকল চিকিৎসকেরা ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন, তারা গতকাল সোমবার অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর তার প্রয়ানের কারণ হিসাবে এই প্রতিবেদন জমা দেন।
এদিকে ভিসেরা রিপোর্টে ফারদিনের শরীরে কোনো বি”ষ বা রাসায়নিক পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে ফারদিনের পরিবারের দাবি, চিকিৎসকরা তদন্ত কর্মকর্তাদের সুরেই কথা বলছেন।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ফারদিনের ময়”নাতদন্তের পর আমরা আগে যা বলেছি তা সত্য, আ”ঘাতের কারণে তার মৃ”ত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, তার ভিসেরা রিপোর্টে কোনো বি”ষ বা রাসায়নিক পাওয়া যায়নি।
সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন, ফারদিন আত্মহ”নন করেছেন, তদন্তকারী সংস্থার মন্তব্য জানতে চাইলে ওপর থেকে লাফ দিয়ে ভারী কোনো বস্তুর আ”/ঘাতে তার প্রয়ান ঘটেছে।
তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চিকিৎসক, মামলার তদন্তকারী সংস্থা ও ছায়া তদন্তকারীরা এখন একই সুরে কথা বলছেন। এটা আমার পরিবারের ও আমার ছেলের প্রতি অবিচার।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছেন। তারা অফিসিয়াল রিপোর্ট পায়নি। তবে ফারদিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া গেছে। শিগগিরই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর আগে ফারদিনের সহপাঠীরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তদন্তকারীরা আত্মহননের কথা জানালে তাদের মনে পাঁচটি প্রশ্ন জাগে। তারা ডিবি ও র্যাবের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চান। উভয় সংস্থাই প্রমাণ সহ তাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এখন সন্দেহ করার কিছু নেই।
শিক্ষার্থীরা ডিবি ও র্যাবের কাছে জানতে চান, ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক জানান, ফারদিনের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাহলে এখন কিভাবে আত্মহনন করতে পারেন? পরে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানায়, ফারদিনের শরীরে আঘাতের চিহ্নগুলো সেতু থেকে লাফ দিয়ে বা পানিতে আঘাত ও স্প্যানে আ’ঘাতের কারণে হতে পারে।
গত ৪ নভেম্বর বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে ঢাকার ডেমরার কোনপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন। সেদিন তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন ৫ নভেম্বর তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন রামপুরা থানায় একটি জিডি করেন।
ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার পর গত ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা প্রথমে তার নিথর দেহ দেখতে পেয়ে নৌ-পুলিশকে খবর দেয়। এদিকে এ ঘটনায় ফারদিনের বাবা ফারদিনের এক বান্ধবীকে প্রধান আসামি করে এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করার মাধ্যমে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় এখনো প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর রিমান্ডে নেয়, তিনি এখনো কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন।