বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর প্রকৌশল বিভাগের ৩য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র ফারদিন নূর পরশকে নিথর কান্ডে কম করে হলেও ১৫ জন অংশ নিয়েছিল, এমনটাই জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। প্রথমদিকে, তার বান্ধবী আয়াতুল্লাহ বুশরাকে অভিযুক্ত করা হলেও ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা অন্য কেউ বর্তমানে সেই তথ্য পেলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চানপাড়া এলাকার নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবসায়ী রায়হানের ইন্ধনেই এ হ”/ত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তবে ফারদিন কি কারণে সেখানে গিয়েছিলেন, কোন ঘটনার জেরে সেখানে গিয়েছিল, নাকি জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, চনপাড়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবসায়ী রায়হানের নেতৃত্বে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার একপাশে ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক পাশে পাহারা বসানো হয়। ৪ নভেম্বর রাতে ফারদিনের উপস্থিতি টের পেয়ে রায়হানসহ ৫ জন রায়হানের তিনতলা বাড়ির সামনে ফারদিনের ওপর হাম”/লা চালায়। এ সময় তাদের আওয়াজ শুনে রায়হানের আরও ছয় সহযোগী এসে বুয়েটের ছাত্র ফারদিনকে আঘা”ত করে।
তাকে নিথর করার পর রায়হান শাওনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় আরও তিনজন এসে ঘটনাস্থলে এদিক ওদিক পায়চারি করে। শাওন রাতে নিজেই একটি সাদা প্রাইভেট কার (EXO) ড্রাইভ করে রায়হানের বাড়ির সামনে আসে। ফারদিনের নিথর দেহটি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে রাতে শীতালক্ষ্যায় ফেলে যায়।
সূত্র আরও জানায়, রূপগঞ্জের চনপাড়া এলাকায় আলোর জ্যোতি ফার্নিচারের দোকান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজের মধ্যে ফারদিনের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ফারদিন সিএনজি করে ওই এলাকায় গেছে অথবা কেউ তাকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে (৭ নভেম্বর) তার নিথর দেহ উদ্ধারের সময় তার পকেটে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। মানিব্যাগে পাওয়া যায় ৩৫ টাকা।
তবে বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো সিসিটিভিতে ছাত্র ফারদিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এবং ঘটনাস্থলে সিসিটিভি থাকলেও তা ছিল উল্টো। ফারদিনের চনপাড়ায় যাওয়ার ফুটেজ সিসিটিভিতে ধরা পড়েনি, আবারও চানপাড়া এলাকায় তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তদন্ত কর্মকর্তারা তার সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত। আবার কি কারণে রায়হান চক্রের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে নিথর করার পর তার দেহটি একটি প্রাইভেটকারে করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেওয়া হয়।
সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আরও জানা যায় যে, ৪ নভেম্বর রাতে ঘটনাস্থল ঘটনাস্থলের আশেপাশে ওই সময় ১৫ জন এদিক ওদিক আসা যাওয়া করে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা একে অপরের সাথে মোবাইল যোগাযোগের বিষয়ে নিয়েও কাজ করছেন। রাত দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে ফারদিনকে নিথর করার ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনাটির ছায়া তদন্তে আমরা বেশ কিছু তথ্য ও পায়ের ছাপ পেয়েছি। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ফারদিনকে নিথর কান্ডে নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবসায়ী রায়হানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। জড়িতদের গ্রেফ”তারে অভিযান চলছে। তাদের গ্রেফতার করা হলে এ ঘটনার কারণ জানা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরা পুলিশ বক্সের সামনে বান্ধবী বুশরাকে ড্রপ করার পর নিখোঁজ হন ফারদিন। ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা তার সন্তানকে খুজে না পেয়ে একটি জিডি করেন থানায়। এরপর নৌ পুলিশ গত ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার নিথর দেহ টি উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকেরা জানায় যে, ফারদিনকে আঘাত করার মাধ্যমে নিথর করা হয়েছে এবং তার শরীরে বেশ কয়েকটি গুরুতর আঘাত রয়েছে। ফারদিনের বাবা দাবি করেন যে তার ছেলেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নিথর করা হয়েছে।