Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ফরিদপুরে ভিন্ন এক গল্প সাজিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নানের মা

ফরিদপুরে ভিন্ন এক গল্প সাজিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নানের মা

খুলনার দৌলতপুর উপজেলাধীন মহেশ্বরপাশা নামক এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে রহিমা বেগম নামে ৫২ বছর বয়সী নিখোঁজ হওয়ার ২৯ দিন পর জীবিত এবং সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এই ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করে। তার নিখোঁজের পর তার সন্তানেরা বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকে দেন। এরপর রহিমা বেগমকে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার একটি এলাকা থেকে উদ্ধার করে। ঘটনাটি নিয়ে এখনো রহস্যের জট খোলেনি। জানা গেছে, মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম (৫২) ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় অবস্থানকালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ নেওয়ার চেষ্টা করেন।

বোয়ালমারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুল হক জানান, কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে আশ্রয় নেয়া এই নারী উপজেলার বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে এসে এ জন্য ইউপি অফিসে যান। আব্দুল হক

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটার দিকে রহিমা বেগম তার কাছে আসেন। এ সময় রহিমা বেগম তাকে জানান, সৈয়দপুর গ্রামে তার জন্ম এবং শৈশব কেটেছে। যদিও পরে তাকে দীর্ঘদিন বাগেরহাটে থাকতে হয়। সেখানে তিনি বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করেন। এখন আবার জন্মভিটায় ফিরে এসেছেন। এসে দেখেন, তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন। এ জন্য তাঁর জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।

ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, এ সময় আমি তাকে বলেছিলাম, আমি আপনাকে চিনি না। আপনার বয়স অনেক। আপনি যে এলাকার বাসিন্দা সেই এলাকার ইউপি সদস্য যদি আপনাকে সার্টিফিকেট দেন, তাহলে জন্ম সনদ দেওয়া যাবে।” এ কথা শুনে রহিমা বেগম ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তিনি আসেননি।

কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি ওই ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর ইউপি চেয়ারম্যান রহিমা বেগমের জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে আসার বিষয়টি জানান এবং তাঁর ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে চেয়ারম্যানকে জানান যে রহিমা বেগম এই এলাকার বাসিন্দা নন। তিনি কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। কুদ্দুস মোল্লা যখন খুলনা ছিলেন, তখন রহিমার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে রহিমা বেগম খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকায় নিজ বাসার আঙিনায় টিউবওয়েলে পানি আনতে গেলে এক ঘণ্টা পরও তিনি বাড়ি না ফেরায় তার সন্তানেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। টিউবওয়েলের পাশে তাদের মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে থাকলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই রাতেই দৌলতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমা বেগমের ছেলে। পরদিন তার মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে থানায় অপহ”রণের মামলা করেন। বিষয়টি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকেও জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। সন্তানেরা ঢাকায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন স্থানে ছুটছিল মায়ের খোঁজে।

তাদের মধ্যে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বাওলা গ্রামের ঝোপ থেকে উদ্ধার হওয়া নিথর দেহটি তার মায়ের। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলপুর থানায় নিথর দেহটি শনাক্ত করতে যান। এ সময় মরিয়ম তার মায়ের দেহ দাবি করে ম”রদেহ নিতে চান। তিনি সেখানে দেহটির শরীরের কাপড় দেখতে পান। এরপর মরিয়ম দাবি করেন দেহটি তার মায়ের। পরে ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন মরিয়ম মান্নান।

শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল। কুদ্দুস মোল্লার ভাতিজা মোহাম্মদ জয়নাল বলেন, আমরা শুনেছি রহিমা বেগম ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন, তবে কী কারণে তিনি চেয়ারম্যানের কাছে গেছেন, আমি জানি না।

এদিকে মোহাম্মদ জয়নাল গতকাল জানান, রহিমা তাকে বলেছিলেন যে তিনি তার প্রয়াত স্বামী মান্নানের কাছ থেকে দুই একর জমি পেয়েছেন। তার সন্তানরা এই জমি বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছিল। ছেলেমেয়েরা জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে চায়। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি রাগ করে চলে আসেন এবং বাড়ি ফিরতে চান না। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের কথাও বলেন রহিমা।

তবে রহিমা বেগম একেক জায়গায় একেক রকম কথা বলছেন, বলে জানিয়েছেন পুলিশ। কারণ তিনি জমিজমার বিরোধের জেরে ঘর ছেড়েছেন এমনটি বলে জন্ম সনদ নেয়ার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে তিনি পুলিশের নিকট জানিয়েছেন যে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে এটা এখন অনেকটা স্পষ্ট যে সবমিলিয়ে ঘটনাটির অনেকটা সাজানো হতে পারে।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *