ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিত বিভাগের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে যৌ/ন হয়রানির অভিযোগে বরখাস্তের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ২০০-৩০০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ান। নতুন পাঠ্যক্রমের জেলা মাস্টার প্রশিক্ষক (গণিত) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান পরীক্ষক (গণিত ও উচ্চতর গণিত) হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। প্রাইভেট না পড়লে কম নম্বর দিতেন। ফলে মেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হয়। আর এ সুযোগে তিনি ছাত্রীদের যৌ/ন নির্যাতন করতেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক অভিভাবক তার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক মমতাজ বেগমকে ডেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। অপর দুই সদস্য হলেন শিক্ষক ড. ফারহানা খানম ও শামসুন আরা সুলতানা। কমিটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আজিমপুর দিবা শাখা থেকে উত্তীর্ণ হওয়া ৭২ জন ছাত্রী এবং সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ১৭৭ জন শিক্ষার্থীর লিখিত মতামত নেওয়া হয়েছে। ১৭ জন শিক্ষার্থী নেতিবাচক মতামত দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের লিখিত প্রশ্ন প্রদান করে তদন্ত কমিটি এসব মন্তব্য নেয়। ১৭ জন ছাত্রী যৌ/ন হয়রানি ও নি/পীড়নের কথা উল্লেখ করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রী বক্তব্যে বলা হয়, “তিনি (শিক্ষক মুরাদ) যারা কোচিং নেন তাদের প্রতি অতিরিক্ত স্বজনপ্রীতি প্রদর্শন করেন। আমি অনেকের কাছে শুনেছি যে তার ব্যবহারে (আচরণগত) সমস্যা রয়েছে। স্যারের কোচিংয়ে একজন জুনিয়র (ছাত্রী) সঙ্গে অনুপযুক্ত আচরণ করা হয়েছে।’
আরেক ছাত্র তদন্ত কমিটিকে বলেন, “সে মজা করতে করতে পড়ান। কিন্তু তার প্রাইভেট পাঠের সময় সে আমার দুই বন্ধু এবং আমার এক জুনিয়র ছাত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। তিনি প্রাইভেট পড়ার সময় হাত, হাঁটু গালসহ আমাদের চুল হাত দিতেন। মাঝে মাঝে আমাদের খাতায় ‘ভালোবাসা’সহ নানা ধরনের কথা লিখতেন। তাছাড়া অপর এক ছাত্রের সাথে অশোভন আচরণ করেন। স্কুলে তেমন কিছু না করলেও প্রাইভেট পড়ানোর সময় এই কাজটা করেন।”
তদন্ত কমিটিকে আরেক ছাত্রী বলেন, আমার সঙ্গে কোনো অনুচিত আচরণ হয়নি। কিন্তু যারা আমার সঙ্গে কোচিং করেছে, তারা বলেছে, তাকে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে। অন্য একজন শিক্ষার্থী জানান, যারা তাকে কোচিং করাতেন তাদের সঙ্গে তার একটু বেশিই ঘনিষ্ঠতা।
আরেক ছাত্রী কমিটিকে বলেন, স্যার কখনো আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। কিন্তু আমাদের কিছু জুনিয়র ছাত্রীর অভিযোগ করেছে। তাদের মতে, স্যার অনেক টাচ ব্যবহার করেন। আমার ছোট বোন আমাকে একই কথা বলেছিল।
স্কুল শাখার এক ছাত্র বলেন, ‘আমি কখনো স্যারের কাছে প্রশিক্ষক হইনি। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন দশম শ্রেণির ছাত্রীদের কাছ থেকে স্যারের নামে অভিযোগ শুনেছিলাম। বেশ কিছু বোন স্যারের খারাপ স্পর্শের শিকার হয়েছে।
আরেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী বলেছে, স্যার পড়ায় ভালো, তবে আচরণ খুব একটা ভালো না। আর তিনজন ছাত্রী বলেছে, স্যার আপনার পড়াশুনা ভালো, কিন্তু আচরণ ভালো না।
আরেক ছাত্রী বলেছে, স্যার গণিত ভালো বোঝেন, বলা যায় আপনি অসংলগ্ন আচরণ করেছেন। স্যার কোচিংয়ে মজা করে আমাদের জড়িয়ে ধরতেন, তারপর হেসে বলেন, মজা করছিলাম।
আরেক শিক্ষার্থী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, ভালো বোঝালেও তার আচরণ আমার পছন্দ হয়নি। সে একবার আমাকে চোখ টিপ মেরেছিলেন।