নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে একটি বিশৃঙ্খলা পরিবেশ তৈরী হচ্ছে। বিয়ষটি নিয়ে নানা মহল থেকে কথা উঠছে। অনেকে ধারনা রাজনৈতিক সংঘাতের কারনে অনির্বাচিত সরকার বা সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসতে পারে। তবে এ বিষয়ে সরকার প্রধান বলেছেন তার কোনো সুযোগ বাংলাদেশের আর হবে না। কারন বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখন অনেক শক্ত অবস্থানে অনির্বাচিত সরকারের সুযোগ আর বাংলাদেশে নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেনাবাহিনীর ‘নিয়ম ও প্রবিধান লঙ্ঘন’ করে জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধানের পদে থেকে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে সব নিয়মকানুন বদলে দেন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। জিয়া নি/হত হওয়ার পর এরশাদও একইভাবে ক্ষমতায় আসে। সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতায় আসার এখন আর কোনো সুযোগ নেই। আমরা গণতন্ত্রের সুরক্ষায় কঠোর আইন করেছি।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশন চলাকালে ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। মঙ্গলবার ভয়েস অফ আমেরিকার ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে এই সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া। এ সময় শতরূপা বড়ুয়া বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, আসন্ন নির্বাচন ও রোহিঙ্গা বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের শাসনামলের বিভিন্ন অর্জনের কথাও তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি। তবে স্বৈরাচারের পতনের পরও সেবার সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সব বিভাগেই স্বৈরশাসকদের আমলের জনগণের প্রভাব থাকায় নির্বাচনী ফলাফলে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। পরে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় আসে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার কয়েক বছর পর স্বৈরাচারীরা এসে ক্ষমতা দখল করে। জাতির পিতার হ/ত্যাকাণ্ডে জড়িত দল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করে। সেনাপ্রধানের পদ থেকে জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেও ঘোষণা করেন। এরপর এরশাদও সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। এখন আর সুযোগ নেই। গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদের কঠোর আইন রয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ হ/ত্যা, অভ্যুত্থান বা ষ/ড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চাইলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রয়োজনে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হবে। গণতন্ত্র ছাড়া ক্ষমতায় আসার কোনো উপায় নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতা জনগণের উপর ন্যস্ত। আমরা সেখানে আরেকটি ধারা যুক্ত করেছি। নির্বাচিত ব্যক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করে কেউ হ/ত্যা, অভ্যুত্থান বা ষ/ড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলে তার শাস্তি হবে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন করেছে, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, মেয়েদের ধ/র্ষণ করেছে, একইভাবে রোহিঙ্গাদের ওপরও নির্যাতন করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে এক কোটি বাঙালি ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল। আমরা কষ্ট বুঝি। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমার ছোট বোন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি ১৬ মিলিয়ন মানুষকে খাওয়ান, কয়েক হাজার রোহিঙ্গার দায়িত্ব নিতে পারেন না? আমরা যতটা সম্ভব তাদের দায়িত্ব নিয়েছি। পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও এগিয়ে আসে।
কিন্তু বাংলাদেশ কেন আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবে না- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। আমাদের অনেক সংকট আছে। রোহিঙ্গারা যখন আসে তখন তাদের ৪০,০০০ মেয়ে গর্ভবতী ছিল। আমরা তাদের চিকিৎসা ও প্রসবের ব্যবস্থা করেছি। এ কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে জনসংখ্যা বেড়েছে। বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের সময় সময়ও আমরা রোহিঙ্গাদের ভ্যাকসিন দিয়েছি। কিন্তু দিন শেষে আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। বন উজাড় করে তাদের আবাসস্থল তৈরি করে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে এই চাপ সামলানো আমাদের জন্য এক ধরনের বোঝা। তাই আমরা বলেছি, এখনই বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। আমরা সবেমাত্র স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের সময়ও বিভিন্ন সংকট মোকাবেলা করতে হয়। দেশেরও ধারণক্ষমতা আছে, যা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত যা মোকাবেলা করা কঠিন। আমরা শুধু তাদের আশ্রয়ই দেইনি, তাদের বাসস্থান, খাবারসহ সব চাহিদা পূরণের চেষ্টা করেছি। সব মিলিয়ে আরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে শতরূপা বড়ুয়া বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের ফলে বাংলাদেশে ভীতির সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে, যা গণমাধ্যমের ব্যাপক আত্ম-সেন্সরশিপের দিকে পরিচালিত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।” এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৯৬ সালে আমি যখন ক্ষমতায় আসি, তখন দেশে মাত্র একটি টেলিভিশন, একটি রেডিও এবং কয়েকটি সংবাদপত্র ছিল। আমি সরকারে আসার পর গণমাধ্যমে বেসরকারি খাতের অন্তর্ভুক্তি উন্মুক্ত করে দিলাম। এখন দেশে ৪৪টি টেলিভিশনের অনুমোদন আছে এবং ৩২টি চালু আছে, এসব চ্যানেলে টক শো’তে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করছেন। সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে নানা কথা বলছেন তারা। সব কথা বলার পর কেউ যদি বলে যে আমাকে কথা বলতে দিলো না, তার কি জবাব আছে?’
শেখ হাসিনা বলেন, একসময় দেশে প্রতি রাতে কারফিউ জারি করা হতো, মানুষ রাস্তায় বের হতে পারতো না। বাংলাদেশে ১৯ বার ক্যু হয়েছে, আরও কয়েকবার ক্যু-এর চেষ্টা করা হয়েছে। সে সময় মানুষ কথা বলতে পারতো না। মত প্রকাশের অধিকার ছিল না। এখন মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সরকার প্রধান বলেন ক্ষমতা থেকে গনতান্তিক ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছি এবং সেটি অব্যাহত রাখতে আইন করা হয়েছে ভবিষ্যতে এমন হবার সুযোগ নেই। দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।