খুলনা মহানগর এলাকার দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা নামক এলাকা থেকে অনেকটা হঠাৎ করেই মাসখানেক আগে নিখোঁজ হয়ে যান ৫৫ বছর বয়সী মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম। অবশেষে গতকাল রাতে তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। দীর্ঘ ২৯ দিন পর গতকাল শনিবার অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বর রাত বারোটার দিকে ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে তাকে জীবিত এবং সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মাকে ফিরে পাওয়ার পর আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন মরিয়ম মান্নান। এ ঘটনার পর আজ রবিবার অর্থাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন।
এদিকে মাকে ফিরে পেয়ে মরিয়ম মান্নান একাধিক স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। এতে তিনি আনন্দ প্রকাশ করে সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যারা এতদিন তার পাশে সাহস যুগিয়েছেন তাদের। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশ ও দেশের মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই বিষয়টিকে অনেকে ‘সাজানো নাটক’ বলছেন। পুলিশও একই কথা বলছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
তবে সে সব সমালোচনাকে আমলে নিচ্ছেন না মরিয়ম। রোববার দুপুরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মায়ের নিথর দেহ পাওয়ার দাবির ব্যাখ্যাও দেন তিনি।
মরিয়ম মান্নান বলেন, আপনাদের (সাংবাদিকদের) খুশি হওয়া উচিত যে আমরা আমাদের মাকে মৃ”তের পরিবর্তে জীবিত পেয়েছি। এখন কে সমালোচনা করছে সেটা বড় কথা নয়। আমি আমার মাকে জীবিত পেয়েছি, তাকে দেখেছি, এটাই বড় কথা।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় একটি নিথর দেহ উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মা নিখোঁজ হওয়ার পর আমি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিখোঁজ পোস্টার টেনেছি। আমার বন্ধুরা যেখানেই থাকুক না কেন আমি পোস্টারগুলিকে মেইল করেছিলাম, তাদেরকে বলেছিলাম সেগুলি তাদের এলাকায় লাগাতে; কেউ খেয়াল করলে। তারা নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে পোস্টার লাগায়। আমিও আমার মাকে খুঁজি যখন সে নিখোঁজ হয়। তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে শোনা গেছে। এরপর ময়মনসিংহ থেকে একটি মেসেজ পাই, যেখানে লেখা ছিল অজ্ঞাত নারীর নিথর দেহ পাওয়া গেছে এবং ফুলপুর থানার ওসির নম্বর দেওয়া হয়েছে।
“এখন ২৭ দিন মাকে দেখিনি। ফুলপুরে একটি নিথের দেহ পাওয়া গেছে, তাকে আমার মা ভাবা কি ভুল? আপনিই বলেন সেটা কি অন্যায়? আপনি যদি একটা দেহ পান, যদি তার কাছে যান সেটা তো অন্যায় না। আমি তো মায়ের খোঁজে গিয়েছি। আমি তো কোনো আসামির রিমান্ড বা ফাঁ”সি দাবি করিনি। আমি তো শুধু আমার মায়ের সন্ধান চেয়েছি।’
“এখন কেউ যাই মন্তব্য করুক না কেন, আমি পাত্তা দিই না। আমি আমার মাকে খুঁজে পেয়েছি। আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করবে সে কোথায় গেল এবং কেন গেল। আমি সেটা দেখতে চাই না। দেশ আইন ও প্রশাসন আছে। ফেস”বুকে কে কি লিখেছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কেউ দাবি করেছে যে আমি ফাঁসানোর জন্য সবকিছু করছি, যা সত্য নাও হতে পারে। এর জন্য প্রশাসন আছে।
এ ঘটনার পর ঐ এলাকার বাসিন্দারা এ বিষয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। অনেকে দাবি করছেন, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যারা প্রতিপক্ষ তাদেরকে বিপাকে ফেলার জন্যই এমন ধরনের নাটক সাজানো হয়েছে। তবে প্রকৃত ঘটনা কি সে বিষয়ে এখনো পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানিয়েছে, এটা একটি সাজানো নাটক হতে পারে।