প্রেমের টানে মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে আসে এটা নতুন কোন ঘটনা নয়। প্রিয় মানুষ টাকে পেতে ধর্ম, জাতি, সমাজ সব কিছুই ছাড়তে পিছুপা হয়না। কোন বাধাই যেন তাকে আটকে রাখতে পারে না তার ভালোবাসার মানুষকে পেতে। তেমন ঘটনায় এবার ঘটল বরিশাল জেলার বরগুনার তালতলী উপজেলার এক তরুণীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে সুদূর ভারতের তামিলনাড়ু থেকে এসেছে এক যুবক।
প্রেমের টানে ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত তামিলনাড়ু থেকে বরিশালে এসে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রেমিকাকে। শুধু একটি বার দেখা না করে বরিশাল ছাড়তে চাচ্ছেন না প্রেমকান্ত নামের ওই যুবক।
এরই মধ্যে ওই যুবক বরিশাল পুলিশ ও সাংবাদিকদের দারস্থ হয়েছেন। আর এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের বরগুনার তালতলী উপজেলার এক তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার নাচ দেখে প্রেমে পড়ে যান। আর প্রেমকান্তের ভিডিওতে প্রতিনিয়ত লাইক কমেন্টেও করতে থাকেন সেই তরুণী।
প্রেমকান্ত বলেন, এভাবেই ফেসবুকের মাধ্যমে একে অপরের মধ্যে পরিচয় ও ভাবের আদান-প্রদান শুরু হয়। টানা তিন বছর তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলে।
প্রেমকান্তের দাবি, শুধু মেয়ের সঙ্গে প্রেম নয়, সুসম্পর্ক হয়েছে দুই পরিবারের মাঝেই। আর তাই প্রেমকান্ত ভিডিও কলের মাধ্যমে নয়, সরাসরি যাকে ভালোবাসেন তাকে দেখার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রেমকান্তের দাবি, তিনি সুদূর ভারতের তামিলনাড়ু থেকে বাংলাদেশের বরিশাল শহরে আসেন এক নজর দেখার জন্য। কারণ ওই তরুণী বরিশালের একটি কলেজে পড়ে। বরিশালে আসার পর দেখাও মেলে ওই তরুণীর সঙ্গে, আর এরপরই প্রেমকান্তের প্রেম নতুন এক দিকে মোড় নেয়।
প্রেমকান্ত, নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা প্রেমকান্ত জানান, ২০১৯ সালে ফেসবুকে পরিচয়ের পর সম্পর্কটি ধীরে ধীরে গভীর হয়। এক পর্যায়ে উভয় পরিবারের মধ্যে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে প্রেমকান্ত বাংলাদেশে এলে ২৪ জুলাই বরিশালের একটি রেস্তোরাঁয় দুজনের দেখা হয়।
তাদের দেখা হওয়ার একদিন পরে, প্রেমকান্ত জানতে পারেন যে তার প্রেমিকার তার অজান্তেই চয়ন হালদার নামে এক যুবকের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। আর তারপর হঠাৎ করেই প্রেমিকা ও তার পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত প্রেমকান্ত প্রেমিকের নতুন প্রেমিকের হাতে মারও খায়।
প্রেমকান্তের দাবি, তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় টাকা। বরিশাল মেট্রোপলিটনের এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের হেফাজতেও থাকতে হয় তাকে।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমলেশ চন্দ্র হালদার জানান, ওই যুবক বৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে থানায় আনা হলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বলেন। ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগের পর গতকাল সকালে ওই যুবককে ঢাকার একটি গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে নিজ দায়িত্বে বিমানযোগে ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
তিনি বলেন, যার সাথে ওই যুবক তার সম্পর্কের কথা বলছে, তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় বিষয়টি হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ওই ছেলেকে বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে অবহিত করে বোঝান। এরপর তাকে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য বলেন, ছেলেটিও ভারতে চলে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়।
আর এত কিছুর পরও যদি প্রেমকান্তের বিশ্বাস দেখা হলে হয়তো তার জীবনে ফিরে আসবে তার প্রেমিকা। তাই তিনি নিজ দেশ ভারতের তামিলনাড়ুতে ফিরে যাওয়ার আগে প্রেমকান্ত তার প্রেমিকার দেখা পেতে চান।
প্রসঙ্গত, একমাত্র ভালোবাসার মানুষকে পেতে সব কিছু সহ্য করেছেন ওই যুবক। সব কিছুর পরও প্রেমিকা পাওয়ার আসা ছাড়েননি ওই যুবক।