Sunday , November 10 2024
Breaking News
Home / Countrywide / প্রেমের টানে এসে গ্রামের মানুষের জন্য বিপাকে সেই আমেরিকান প্রকৌশলী ক্রিস্ট মার্ক

প্রেমের টানে এসে গ্রামের মানুষের জন্য বিপাকে সেই আমেরিকান প্রকৌশলী ক্রিস্ট মার্ক

অনেক বিদেশি প্রেমের টানে সুদূর বিদেশ থেকে এসেছেন বাংলাদেশে। একসময় তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবন শুরু করেন। তেমনই একজন ব্যাক্তি হলেন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস্ট মার্ক হোগল। বছর পাঁচেক আগে প্রেমের টানে বাংলাদেশে রহিমা খাতুনকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর তারা সুখেই দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেছেন। বাংলাদেশের মেয়েকে বিয়ে করার পর সেখানকার গ্রামের মানুদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেন। কিন্তু গ্রামের মানুষকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে এখন বিপাকে পড়েছেন তিনি।

যশোরের কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর গ্রামের রহিমা খাতুনের প্রতি ভালোবাসার টানে ক্রিস্ট মার্ক বাংলাদেশে এসে পাঁচ বছর কাটিয়েছেন। বাংলাদেশে আসার পর গ্রামের মানুষের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলেও এখন আর মানিয়ে নিতে পারছেন না। দম্পতি অভিযোগ করেছেন যে তারা তাদের জীবনে প্রতিনিয়ত বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন।

ক্রিস্ট মার্ক ও রহিমা অভিযোগ করে বলেন, প্রথম দেশে এলে এলাকার লোকজন তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। মাস খানেক পর প্রতিবেশীরা বিভিন্ন সমস্যা ও অজুহাতে আর্থিক সাহায্যের জন্য ক্রিস্ট মার্কের বাড়িতে আসত এবং দ্রুত পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্রাইস্ট মার্কের কাছ থেকে টাকা ধার নিত। ক্রাইস্ট মার্কও কখনোই সমস্যার কথা শুনে কাউকে খালি হাতে ফিরে যেতে দেননি। পরে ধার করা টাকা চাইলে ক্রিস্ট মার্ক হোগল ও রহিমাকে বিভিন্ন হুমকির মুখে পড়তে হয়। এ পর্যন্ত মেহেরপুর গ্রামে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে মোট ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়ার দাবি করেছেন ক্রিস্ট মার্ক।

এদিকে যশোরের কেশবপুরের মেহেরপুর গ্রামে এসে ক্রিস্ট মার্ক চারতলা বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে বাড়ির চারটি ছাদের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ক্রাইস্ট মার্কের সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। মেহেরপুর গ্রামের চিকিৎসা সুবিধা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে হওয়ায় তিনি তার নির্মাণাধীন বাড়িতে একটি বেসরকারি হাসপাতাল করতে চান। হাসপাতালটির নাম দিতে চান রহিমা সোলজার্স। এই হাসপাতালে আমেরিকান এবং বাংলাদেশি চিকিৎসকরা সেবা দেবেন।

রহিমা বলেন, দেশে এসে কিছুদিন আমরা সামাজিকভাবে শান্তিতে বসবাস করছিলাম। আমার স্বামী ক্রিস্ট মার্কের সরলতার সুযোগ নিয়ে গ্রামের কিছু লোক তার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ধার নেয়। পরে নানা অজুহাত দেখিয়ে এ টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তাদের কাছে টাকা চাইলে নানা হুমকির মুখে পড়তে হয়।

তিনি আরও বলেন, “যদিও আমি আমার স্বামী ক্রিস্ট মার্ক এবং আমার সন্তানদের সাথে সুখে সংসার করছি, তবুও সমাজ আমাদের বিচ্ছিন্ন করছে।” আমাদের ব্যবহার করে এখন আমাদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ক্রিস্ট মার্ক খ্রিস্টান থেকে মুসলমান হয়েও সমাজের অনেকেই আমাদের সম্পর্কে বাজে কথা বলে। বর্তমানে এলাকার অনেক মানুষ ক্রিস্ট মার্কের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।

রহিমা জানান, ক্রিস্ট মার্ক এখানে একটি বাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি সিদ্ধান্ত বদলেছেন। গ্রামের মানুষের কথা ভেবে নিজ বাড়িতে একটি বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণ করবেন তিনি। আগামী এক বছরের মধ্যে এ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

“আমি এখানে খুব খুশি,” ক্রিস্ট মার্ক হোগল বলেছেন। রহিমার পাশে আমি আরও ভালো আছি। আমি এক মুহুর্তের জন্যও রহিমাকে চোখের আড়াল করতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, এলাকার কয়েকজনকে টাকা দিয়েছি। তারা এখনও আমাকে ফেরত দেয়নি। এই টাকা ফেরত না পেলে অনেক সমস্যায় পড়ব।

মেহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, রহিমা ও ক্রিস্ট মার্ক খুব সুখে শান্তিতে আছেন। তবে অনেকেই সামাজিকভাবে তাদের সুখী জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করছে। ক্রিস্ট মার্কের কাছে কেউ সাহায্যের জন্য আসলে খালি হাতে ফিরে যায়নি। তবে ক্রিস্ট মার্ক টাকা ধার দিয়ে এলাকার মানুষের উপকার করলেও বিনিময়ে এলাকার মানুষ তাকে লা”ঞ্ছিত করছে।

তুহিন হোসেন বলেন, ক্রিস্ট মার্ক ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। এখানে তিনি একটি হাসপাতাল নির্মাণ করবেন। কিন্তু তিনি অনেককে লাখ লাখ টাকা ধার দিয়েছেন। যা এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। টাকা উদ্ধার হলে তার জন্য এই হাসপাতাল নির্মাণ সহজ হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এদিকে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে রহিমার অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে চাইলে ক্যামেরার সামনে কেউ কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রহিমার এসব অভিযোগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

রহিমা অভিযোগ করে বলেন, শুধু প্রতিবেশীরাই নয়, সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তকে বিভিন্ন সমস্যার কথা বললেও তিনিও এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ বিষয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে তার মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, রহিমা বা ক্রিস্ট মার্ক কেউই এখনো আমার কাছে আসেনি। তারা এসে লিখিত অভিযোগ দিলে টাকা লেনদেনের কাগজপত্র থাকলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

প্রসঙ্গত, রহিমা খাতুন যশোরের কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর গ্রামের প্রয়াত্ আবুল খারের মেয়ে। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে দারিদ্র্যের কারণে ভারতে পাড়ি জমান। তার মা পশ্চিমবঙ্গের বারসায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বাবা শ্রম বিক্রি করতেন। ১৩ বছর বয়সে তার বাবা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। একে একে তিনটি সন্তান তার কোলে আসে।

রহিমা খাতুন দু-এক লাইন হিন্দিতে কথা বলতে পারতেন। সে সময় তিনি ক্রিস্ট মার্কের সাথে হিন্দিতে কিছুটা কথা বলতে পারেন। এরপর তারা পুনরায় সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই সৃষ্টি হয় তাদের মধ্যে ভালোলাগা এবং ভালোলাগা থেকে তা ভালোবাসায় গড়ায়। মাস ছয়েক আগে তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করার এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এবার রহিমা খাতুন সেখান থেকে চলে আসেন কেশবপুরের মেহেরপুরে তার পৈতৃক ভিটায়। এখানে তারা একসাথে পাঁচটি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন।

About bisso Jit

Check Also

জেলে থেকে শত কোটি টাকার মালিক আলমগীর

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি এবং সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আলমগীর হোসেন ও তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *