Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / প্রেমের টানে এসেছিলেন বাংলাদেশে, ফিরে গিয়েও ভয়ের স্মৃতি তাড়া করছে কিশোরীকে

প্রেমের টানে এসেছিলেন বাংলাদেশে, ফিরে গিয়েও ভয়ের স্মৃতি তাড়া করছে কিশোরীকে

আলাপ শুরু হয় অনলাইনে, এরপর গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। আর সেই প্রেমের কারণেই ঘর ছাড়েন রেখা (নাম পরিবর্তিত)। উদ্দেশ্য বাংলাদেশে তার প্রেমিকের কাছে, রওনা হন বাংলাদেশে। কাটা তারের বেড়া পার হয়ে বাংলাদেশে এসে হাত ধরে প্রেমিকের। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিবারের সদস্যরা কখনো বুঝতেও পারেনি। তবে প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা তরুণীর অভিজ্ঞতাটা মোটেও সুখকর ছিল না।

প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে তাকে। সে বুঝতে পারে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে গেছে। তারপর বাড়ি ফেরার জন্য দিন গুনতে লাগলেন। অবশেষে ১০ মাস পর বাংলাদেশ থেকে দেশে ফেরেন তিনি। তবে বাড়ি ফেরার পরও তার মুখে ভয়ের ছাপ এখনো স্পষ্ট। তখনও ধাক্কা সামলাতে পারেননি তিনি। আজও, যখন তার প্রায় ১০ মাস আগের কথা মনে পড়ে, রেখা ঘুমের মধ্যেও কেঁপে ওঠেন। যদিও এই পরিস্থিতিতে পাশে আছে পরিবার।

রেখার বাড়ি নদীয়ার তাহেরপুরে। দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপর সেখান থেকে প্রেম। প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে বাংলাদেশে পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তিনি। একইভাবে,২০২১ সালের ডিসেম্বরে, তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পৌঁছেছিলেন। রেখার এই কীর্তি টের পাননি পরিবারের সদস্যরা। নতুন জীবন শুরুর আনন্দে অভিভূত হয়ে যায় রেখা।

এমনকি, কীভাবে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছাবেন, তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ওই যুবক। প্রেমিকের দেওয়া পথে হেঁটে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি। তবে তার ভুল ভাঙল পাশের দেশে পা রাখার পর। এসময় রেখাকে না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের ঘুম উবে যায়। তারা কোথাও তাকে আর খুঁজে পায়নি। পরে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে বাধ্য হন। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। এভাবেই কেটে গেল দুই মাস। তারপর হঠাৎ একদিন রেখা বাড়িতে ফোন করে। সে তার মাকে জানায় যে সে গোপনে ফোন করছে। তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। তিনি একজন বাংলাদেশী যুবককে বিয়ে করে জানান যে তিনি কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে ছিলেন। তিনি আরও বলেন, সেখানে তার সঙ্গে ‘অশুভ আচরণ’ করা হচ্ছে। এদিকে মেয়ের কথা শুনে রেখার মা বিধ্ব’/স্ত হয়ে পড়েন। প্রতিবেশী দেশ থেকে মেয়েকে কিভাবে দেশে আনবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

সঙ্গে সঙ্গে তার বাবা-মা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর রেখাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সমাজকর্মীরাও। বাংলাদেশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। খবর পেয়ে বাংলাদেশ পুলিশ একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এরপর দুই দেশের তৎপরতায় ১০ মাস পর দেশে ফেরেন রেখা। অবশেষে মেয়েকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত পরিবারের সদস্যরা।

মেয়েটি জানায়, তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান তিনি। কিন্তু, সেখানে পা রেখেই তার মোহভঙ্গ হয়। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তাঁর স্বামী তাঁকে ‘খারাপ কাজ’ করানোর চেষ্টা করেছিলেন। তারপর স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় তাকে মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসানো হয়। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

বাড়ি ফিরেছেন রেখা কিন্তু তার মনের থেকে ভয় দূর হয়নি। বাবা-মা তাদের স্নেহাচলে সব সময় আবদ্ধ করে রাখছেন। বাবা-মার সঙ্গে তার কাটছে প্রায় সারাটা দিন। তবে বড় ধরনের ধাক্কা কাটানোর পর তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে। তার বন্ধুরা তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। আগামী দিনে সে তার পড়াশোনাটা চালিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *