Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / প্রেমের টানে আসা প্রেমকান্ত ফিরবেন না দেশে, অনড় হয়ে দিলেন শর্ত

প্রেমের টানে আসা প্রেমকান্ত ফিরবেন না দেশে, অনড় হয়ে দিলেন শর্ত

সম্প্রতি প্রেমকান্ত নামের এক যুবক বাংলাদেশের এক তরুনীর ‘প্রেমের টানে’ ভারতের তামিলনাড়ু নামক রাজ্য থেকে গত ২৪ জুলাই বরিশালে এসেছিলেন। তবে বাংলাদেশে এসে বিপাকে পড়েছেন ওই যুবক, কারণ তিনি যে যুবতীর সাথে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করছেন বলে ওই যুবক দাবি করেন। এখন ওই যুবককে অনেকটা খালি হতেই দেশে ফিরতে হতে পারে। তবে ওই যুবক দাবি করছেন, ওই তরুণী এবং তার পরিবারের আশ্বাসে বাংলাদেশে এসেছেন।

তরুনী বাংলাদেশে আসার পরদিন একটি কলেজের সামনে কথিত প্রেমিকার সঙ্গে দেখা হয় তার। প্রেমকান্তের দাবি, তার সঙ্গে আরও দুবার বিভিন্ন জায়গায় দেখা হয়েছে। কিন্তু তরুণী এখন তাকে ‘এড়িয়ে’ চলছেন। তবুও হাল ছাড়েননি প্রেমকান্ত। তরুণীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে চান ওই যুবক। এ কারণে তিনি বরগুনায় এসেছেন। তাদের সঙ্গে দেখা না করে দেশে ফিরবেন না বলে জানান তিনি।

এদিকে প্রেমকান্তের কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয়ে মেয়েটির পরিবার আইনি সহায়তা পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে। শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে বরগুনার তালতলী থানায় অভিযোগ করেন তার বাবা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রেমকান্ত বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং আমি আমার প্রেমিকার আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলাম। ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই তরুণীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। প্রথমে তিনি আমার টিকটক ভিডিওতে লাইক-কমেন্ট করতেন। তারপর আমরা অনলাইনে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে প্রেম। এমনকি যুবতীর পরিবারের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অনেক দিন আগে আমি তার সাথে দেখা করতে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের কারনে, আমি আসতে পারিনি।

প্রেমকান্ত জানান, গত ২৪ জুলাই তিনি বরিশালে আসেন। তারপর শহরের একটি হোটেলে ওঠেন। পরদিন দুপুর ১২টায় বরিশালের একটি কলেজের সামনে দুজনের দেখা হয়। শহরের একটি রেস্টুরেন্টে একসাথে লাঞ্চ করেন। ওইদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে তারা আবার দেখা করেন এবং কথা বলেন। এ সময় মেয়েটির সঙ্গে তার কয়েকজন বন্ধুও ছিল। ২৭ জুলাই তারা আবার বরিশাল শহরে বেড়াতে বের হন। এ সময় তিনি কাশীপুর এলাকায় গেলে ওই তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেন এক যুবক। এরপর প্রেমকান্তকে মা”রধর করেন ওই যুবক। এ সময় তার কাছ থেকে টাকাও ছি”নিয়ে নেওয়া হয়। এই ঘটনায় তিন রাত থানায় থাকতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রেমকান্ত।

তিনি বলেন, ‘বরিশালে আসার পর তিনবার দেখা হয়েছে। কিন্তু তারপর থেকে সে আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। কেন এড়িয়ে যাচ্ছে সে সেটা জানি না। এটা আশ্চর্যজনক। তিন বছরের সম্পর্ক ছেলেখেলা নয়। তার কথা ভেবেই এ দেশে এসেছি। তার সাথে দেখা করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আমি তাকে বিয়ের জন্য জোর করছি না। আমি তার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছি। তাদের সঙ্গে দেখা না করে দেশে ফিরব না।

প্রেমকান্তের কথিত প্রেমিকা বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়। এক পর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি প্রত্যাখ্যান করি। বাংলাদেশে এসে আমার পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে বলে। আমি এটাকে পাত্তা দিইনি। অবশেষে চলতি মাসের শুরুতে তিনি আমাকে জানান, দেখা করতে বাংলাদেশে আসবেন। আমি তাকে আসতে নিষেধ করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই মানতে রাজি নন। ২৪ জুলাই তিনি যখন বরিশালে আসেন, আমি যে কলেজে পড়তাম তার সামনে ঘুরে বেড়াতেন।

মানুষের মা”রধর ও প্রেমের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে ওই তরুণী বলেন, ‘এসব কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেখানে তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন সে অনেক জোর করতে শুরু করে, আমি নিরাপত্তাহীন বোধ করতে শুরু করি এবং আমার বাবা-মাকে জানিয়েছিলাম। তারা পুলিশকে বিষয়টি জানালে, আমার বাবা-মা প্রেমকান্তকে জিজ্ঞাসা করেন যে কোনও অভিযোগ আছে কিনা। সেখানে তিনি ঢাকায় এসে ভারতে যাবেন বলে জানান। কিন্তু সে যাচ্ছে না, বরিশালে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমার নামে মিথ্যা কথা বলছে।’

পুলিশে অভিযোগের বিষয়ে মেয়েটির বাবা বলেন, আমরা জানতাম শনিবার ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবে। কিন্তু হঠাৎ করেই শুক্রবার তালতলীতে জানতে পারি। সে তালতলী এসে আমার মেয়েকে আবারও প্রেমিকা দাবি করে এবং নানা ধরনের কথাবার্তা ছড়ায়। স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। ওই ভারতীয় যুবকের সঙ্গে আমার মেয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি এখানে এসে আমাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছেন।

তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, শুক্রবার দুপুরে ভারতীয় নাগরিক প্রেমকান্ত তালতলীতে আসেন। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে নিরাপত্তার জন্য তাকে নজরদারিতে রেখেছি। বিকেল ৫টার দিকে বরগুনার উদ্দেশ্যে তালতলী ত্যাগ করেন।’

তিনি আরও বলেন, তরুণীর বাবা বাংলাদেশে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা অপবা’দ ছড়ায় বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেহেদী হাসান যিনি বরগুনা সদর সার্কেলের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি জানান, আমরা শুনেছি ভারত থেকে এক যুবক বাংলাদেশে এসে প্রথমে বরিশালে ছিলেন সেখান হতে তিনি চলে যান তালতলী এবং পুনরায় তালতলী থেকে বরগুনায় ফিরে এসেছেন। তবে আমরা তার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব এবং তিনি যাতে নিরাপদে আবার দেশে তার পরিবারের নিকট ফিরতে পারেন সে বিষয়ে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এদিকে ওই যুবকের বিরুদ্ধে একজন কলেজ ছাত্রীর পিতা অভিযোগ তুলেছেন এবং মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়টির সত্যতা যাচায় করে পরবর্তী পদক্ষেপে যাব।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *