প্রেমিকাকে প্রেমিকের হাতে তুলে দেবেন এমনই ফোন কলের মাধ্যমে সংবাদ দেন প্রেমিকার বাবা। প্রেমিকার বাবার এমন ফোন পেয়ে উচ্ছাসিত হয়ে প্রেমিকার বাড়িতে যান ফয়সাল প্যাদা। সেখানে উপস্থিত হতেই ঘটলো প্রেমিকার বাবার দেওয়া প্রতিশ্রুতির ভিন্ন এক ঘটনা। মেয়েকে ফোন দিয়ে ডেকে আনা যুবকের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে উল্টো তাকে লাঞ্চনার শিকার করেন প্রেমিকার বাবা ও তার স্বজনেরা। বেদম প্রহার করে শিকল দিয়ে গাছের সাথে বেধে রাখেন ফয়সাল প্যাদাকে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আইনি সহায়তা নিয়েছেন এমনটাই জানা গেছে ভুক্তভোগীর স্বজনদের মাধ্যমে।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রেমিককে বাড়িতে ডেকে শিকল দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের একপর্যায়ে প্রেমিকের মাথার চুল কেটে অর্ধেক কামানো হয়। বুধবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর কাজীর হাওলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে রাঙ্গাবালী থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ ও আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- মামুন হাওলাদার (২২) ও রিয়াজ হাওলাদার (৩৫)। তাদের বাড়ি সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজীর হাওলা গ্রামে। জানা গেছে, ভুক্তভোগীর নাম ফয়সাল প্যাদা (১৮)। সে সদর ইউনিয়নের ১৯ নম্বর গ্রামের ফজলু প্যাদারের ছেলে ও রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজীর হাওলা গ্রামের খবির হাওলাদারের মেয়ে কাশিয়াবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আনিশার সঙ্গে কলেজ ছাত্র ফয়সাল প্রেম করে। তাদের দীর্ঘদিনের প্রেমের বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় দুই পরিবারের। মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ১০টায় আনিশার বাবা খবির হাওলাদার ফয়সালকে তার মোবাইলে ফোন করে মেয়েটিকে তার কাছে হস্তান্তরের জন্য বাড়িতে ডেকে পাঠান।
ফোন পাওয়া মাত্রই বান্ধবীর বাসায় ছুটে যায় ফয়সাল। বাড়িতে পৌঁছে ফয়সালকে হাতকড়া পরিয়ে, মারধর ও মারাত্মকভাবে হাতকড়া পরানো হয়। একপর্যায়ে মাথার ত্বকের চুল কেটে মুণ্ডন করা হয়। পরে তার মাথায়ও আলকাতরা লাগানোর চেষ্টা করে নির্যাতিতারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টায় ফয়সালকে উদ্ধার করে। বিবৃতিতে বলা হয়, ফয়সালকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পুলিশ জানায়, ফয়সালের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন তার মা আকলিমা বেগম। মামলার আসামি বাবা খবির হাওলাদার পলাতক রয়েছেন। মামলার বাদী আকলিমা বেগম বলেন, ছেলেকে মারধর করছে, সেখানে গেলে আমাকেও মেরে ফেলতে চায়। আমি গিয়ে দেখি আমার ছেলে শিকল বাঁধা। চুল কামানো (টাক)। পরে পুলিশকে খবর দেই। তারা এসে আমার ছেলেকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। নির্যাতনের শিকার ফয়সাল জানান, তাকে পিটিয়ে আহত করা হয় এবং অজ্ঞান করা হয়। পানি ছিটানোর পর আবার মেরে অজ্ঞান ফেলে। রাঙ্গাবালী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে তাৎক্ষণিক আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, বুধবার (২২ জুন) দুপুরে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় এক যুবককে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বাড়িতে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেন এমনই এক ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তদের নামে ভুক্তভোগীর মা নিজেই বাদী হয়ে স্থানীয় থানা মামলা করেন। ভুক্তভোগী রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় প্রেমিকের বাবা, চাচা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাঙ্গাবালী থানায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- রিয়াজ হাওলাদার, মামুন হাওলাদার ও খবির হাওলাদার। তাদের বাড়ি রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের নিঝাওলা গ্রামে। মামলার প্রধান আসামি রিয়াজ হাওলাদার ও দ্বিতীয় আসামি মামুন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।