এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। অথচ যুদ্ধের শুরুটা হয়েছিল দেশটির প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থেকে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, এই যুদ্ধে ৬ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। বহু শহর ধ্বংস হয়ে গেছে অন্যান্য দেশও জড়িয়ে পড়েছে। বহু মানুষ বাস্তুচ্যুতও হয়েছে।
সংঘাত শুরুর আগে থেকেই অনেক সিরিয়ান বেকারত্বের উচ্চ হার, দুর্নীতি এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনে রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার মতো বিষয় অভিযোগ তুলে আসছিল। এসব নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে অস্থিরতা ছিল। বাশার ২০০০ সালে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রযাত্রার মুখে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা প্রায় বিনা বাধায় রাজধানীতে প্রবেশ করলে আসাদ একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। তবে তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
আজ রোববার (৮ ডিসেম্বর) রয়টার্সের বরাতে বিবিসি জানায়, সিরিয়ার দুটি উচ্চপর্যায়ের সরকারি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিদ্রোহীরা ইতোমধ্যে দামেস্কের আশপাশের বেশ কিছু এলাকা এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হোমস শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন, দামেস্ক এখন বিদ্রোহীদের দখলের দিকে এগোচ্ছে। বিদ্রোহীরা রাজধানীতে প্রবেশ করার পথে সরকারি বাহিনীর কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি।
এসওএইচআর ওয়ার মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, একটি ব্যক্তিগত বিমান, যা সম্ভবত প্রেসিডেন্ট আসাদকে বহন করছিল, দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। বিদ্রোহীদের দাবি, তারা সেদনায়া কারাগারের বন্দিদের মুক্তি এবং সরকারের নিপীড়ন যুগের অবসান উদযাপন করছে।
এর আগে, হোমস শহর থেকে সরকারি সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করেন। বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন, “আসাদ চলে গেছে, হোমস মুক্ত” এবং “সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক।”
প্রসঙ্গত, ২০০০ সাল থেকে বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ প্রায় তিন দশক দেশটি শাসন করেন। ২০১১ সালে আসাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হলে তা ক্রমশ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি আসাদের সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ২০১৫ সালে রাশিয়া বড় ধরনের সামরিক সহায়তা প্রদান করে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি আসাদের শাসনের ইতিহাসে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।