তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান দ্বন্দ্বের চরম মূল্য দিতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। বোর্ড কর্মকর্তারা, সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং ‘পঞ্চপণ্ডবর’-এর অন্য দুই সদস্য মুশফিক রহিম ও মাহমুদউল্লাহ দলের সেরা দুই তারকার এই দ্বন্দ্ব নিরসনে একাধিকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
কিন্তু এই দুই ক্রিকেটার ছিলেন জানে জিগার বন্ধু। তাদের দ্বন্দ্বের দিকে পরিচালিত ঘটনাগুলি দেখুন…
2007 বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাফল্যে পঞ্চপান্ডব অনেক অবদান রেখেছেন। তারা ছাড়াও হাবিবুল বাশার-আশরাফুলসহ আরও কয়েকজন অবদান রাখলেও সাকিব-তামিমের পাশাপাশি মাশরাফি-মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ টাইগার ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শক্ত পায়ে দাঁড় করিয়েছেন।
দেশকে অনেক সাফল্য উপহার দিয়ে তারা যেমন বড় তারকা হয়ে উঠেছেন, তেমনি দর্শকের হৃদয়েও জায়গা করে নিয়েছেন। তামিম-সাকিবের দারুণ বন্ধুত্ব শুরু হয় ক্রিকেট মাঠে। এক সময় এই জুটিকে বলা হত ‘হরিহর আত্মা’। তবে ২০১৯ সালে মাশরাফি দল থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকেই দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
অভিযোগ, বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আকরাম খানের কিছু ভূমিকা বিরোধে ইন্ধন জোগায়। জাতীয় দলের চেয়ে আইপিএলকে গুরুত্ব দেওয়ায় সাকিবের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আকরাম। সেই প্রশ্নে ভাগ্নে তামিমের পক্ষ নেন, ধরে নেন সাকিবও আকরামের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বাউন্সার ছুঁড়তেও দ্বিধা করেননি। আকরামকে বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়।
সাকিব-তামিম বিবাদে বিজ্ঞাপনের বিষয়টিও বড় ভূমিকা পালন করেছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবের বিজ্ঞাপনের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এতে বিজ্ঞাপনী এজেন্টদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন তামিম, রেগে যান সাকিব। এতে দুজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ নিয়ে সাকিব-তামিমের স্ত্রীদের মধ্যেও আলোচনায় দুজনের সম্পর্ক চরম আকার ধারণ করে। মুখের ভাবও থেমে যায়।
চলতি বছরের শুরুতে যখন বোর্ড সভাপতি সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে; ক্রিকেটপ্রেমীরা ভেটার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ দুই ক্রিকেটারের এই দ্বন্দ্বে জল ঢেলে দিয়েছেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। দুজনেই তামিমের চেয়ে সাকিবকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। দলের যেকোনো বিষয়ে সাকিবের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। তামিম চন্ডিকারের কিছু বিষয় পছন্দ করেননি, যা তামিম এবং বোর্ড সভাপতি এবং কোচের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছিল। এ সুযোগে পাপন ও কোচের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা করেন সাকিব।
অবশেষে পিঠের চোট তামিমকে আরও ব্যাকফুটে ঠেলে দিল। সাকিব ও হাথুরুসিংহে যখন এই সুযোগে একজন আনফিট ক্রিকেটারের চেয়ে সম্পূর্ণ ফিট ক্রিকেটারকে প্রাধান্য দিতে হবে, তখন বোর্ড সভাপতি তা গিলতে বাধ্য হন। আর এভাবেই বাংলাদেশ বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে অংশ নিচ্ছে অভিজ্ঞ তামিমের জায়গায় মাত্র ৫টি ওয়ানডে খেলা ওপেনারকে নিয়ে।