Tuesday , November 19 2024
Breaking News
Home / Countrywide / প্রহার করতে করতে মাদ্রাসার শিক্ষককে নিয়ে গেল ইউনিয়ন পরিষদে, জানা গেল কারণ

প্রহার করতে করতে মাদ্রাসার শিক্ষককে নিয়ে গেল ইউনিয়ন পরিষদে, জানা গেল কারণ

অনেক ক্ষমতাসীন ব্যক্তি রয়েছে যারা নিজেদের ক্ষমতা কাটিয়ে অন্যের উপর অন্যায় ভাবে অত্যাচার করে।  তারা সবকিছুতে আপস করলেও কখনো নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে আপস করে না। প্রায় তিন মাস আগে ক্ষমতার জোর খাটিয়ে এক শিক্ষকে প্রহার  করার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় । 

জানা গেছে ,  হয়বতপুর ফাজিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদ গঠিত হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের অনুসারী মাসুমকে সভাপতি করে কমিটি গঠন করা হয়। তবে এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ। তারা ওই মাদ্রাসার প্রধান ও অন্যান্য শিক্ষকদের কমিটি পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয়। কথামতো কমিটি পরিবর্তন না করায় প্রকাশ্যে মারধরের শিকার এক শিক্ষককে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ঘটনার পর মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ কর্মীরা ফিরে এসে বৃহস্পতিবার থেকে মাদ্রাসায় কোনো ক্লাস না করার নির্দেশ দেন। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ বৃহস্পতিবার থেকে নির্ধারিত ক্লাস চলবে বলে জানান তারা।

মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক শরীফসহ অন্য শিক্ষকরা জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবারও মাদ্রাসায় ক্লাস শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ঘণ্টা পর হঠাৎ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী মাদ্রাসায় ঢুকে শিক্ষকদের কমিটি পরিবর্তনের নির্দেশ দেন। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকতকে মারধর শুরু করেন আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ সময় স্থানীয় লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি দেখে অন্য শিক্ষকরা ছুটে এসে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে মাদ্রাসার একটি কক্ষে নিয়ে যান। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে চলে যান।

কিছুক্ষণ পর তাদের একজন ফিরে এসে শিক্ষককে দরজা খুলতে বলেন। মাদ্রাসার কর্মচারীরা ভাবলে শিক্ষক দরজা খুলে দিলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাকে আবার মারধর শুরু করে। এরপর তারা ওই শিক্ষককে প্রকাশ্যে মারধর করে পাশের লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে রাস্তা দিয়ে নিয়ে গিয়ে আবারও মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

কমিটি গঠনের পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত বলে দাবি স্কুল শিক্ষকদের। কিন্তু শিক্ষকরা চান শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। শিক্ষক লাঞ্ছনার সুষ্ঠু তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন তারা।

ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ও পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা মাদ্রাসায় ছুটে যান। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের জানান, এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের শাসন করেছে যাতে আগামীকাল থেকে মাদ্রাসায় কোনো ক্লাস হবে না।

বিষয়টি শোনার পর জেলা প্রশাসক তাদের আশ্বস্ত করেন যে আগামীকাল থেকে যথারীতি ক্লাস চলবে এবং যারা দোষী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবেন।

সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ব্যাপারে তার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি বলেও দাবি করেন ওসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, আমি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই মাদ্রাসার লোকজনের ক্ষোভ দেখি। সেখানে গিয়ে কথা বলতে চাইলে শিক্ষক চেয়ার ছুড়ে মারে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার সঙ্গে থাকা লোকজন ও স্থানীয় কয়েকজন তাকে মারধর করে।

বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

একজন শিক্ষককে প্রহার করার ঘটনা অনেকে অপ্রত্যাশিত বলে জানিয়েছেন।  একজন শিক্ষক যিনি  ছাত্রদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে থাকে তার সাথে এমন আচরণ স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেনা এলাকাবাসী । এছাড়া এ ঘটনার পরে অনেক নেটিজেন নিন্দা জানিয়ে তাদের যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন । তারা অভিযুক্ত আসামি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন । 

About Nasimul Islam

Check Also

নির্বাচন দিতে দেরি করলে মানুষ সন্দেহ করবে, সমস্যা বাড়বে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ হলে দেশের সমস্যা আরও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *